কারাবন্দি জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও কারাগারে চিঠি পাঠানোর ঘটনায় সারা দেশের কারাগারে স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করা হয়েছে, যার সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা অস্ত্র নিয়ে কারাগারের চারদিকে পাহারায় থাকছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত আইজি প্রিজনস কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, সারা দেশের কারাগারে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে যে চিঠিতে ওই হুমকি দেওয়া হয়েছে সেই চিঠি কারা পাঠিয়েছে, সেটা অনুসন্ধান করছেন গোয়েন্দারা।
জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকির চিঠি দেওয়া ও ফোন করার বিষয়ে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ধরনের উড়োচিঠি ও কাগজ আমাদের কাছে সব সময়ই আসে এবং বিভিন্ন জায়গায় যেয়ে থাকে। এ বিষয়ে আমরা কখনো মনোযোগ দিই না। তবে আমরা সব সময় তথ্যভিত্তিক কাজ করে থাকি। আমাদের কাছে যখন গোয়েন্দা তথ্য আসে তখনই আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। উড়োচিঠি যেগুলো আসছে সেগুলো গোয়েন্দাদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তাঁরা যদি মনে করেন এগুলোর কোনো ভিত্তি আছে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
কারা সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে লালমনিরহাট কারাগার ও লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চিঠি ও ফোন আসে। গত রবিবার কারা অধিদপ্তর থেকে কারাগারগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ১৮টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনাও রয়েছে। এ নির্দেশনার পর গত মঙ্গলবারের মধ্যে দেশের সব কারাগারে স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করা হয়।
দেশের সবচেয়ে বড় কারাগার কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। এই কারাগারে স্ট্রাইকিং ফোর্স গঠন করা হয়েছে। তিনটি স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা আট ঘণ্টা করে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এ ফোর্সের প্রধান হিসেবে রয়েছেন জেলার। এ ছাড়া প্রতি টিমে একজন করে ডেপুটি জেলার, প্রধান কারারক্ষীসহ পাঁচজন করে সশস্ত্র কারারক্ষী রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স আগেও ছিল। তাতে সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে।’
চিঠির তদন্ত : সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক ও কারাগারে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার যে চিঠি পাঠানো হয়েছে সেটি কোথা থেকে কারা পাঠিয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে চিঠিটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার পরামর্শ পাওয়ার পর বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করে।
একটি সূত্রের দাবি, এ চিঠির পেছনে কারাগারের অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দল রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেউ কাউকে ফাঁসানোর জন্য অথবা অস্থিরতা তৈরির জন্য এমন চিঠি দিয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এক কারা কর্মকর্তা জানান, চিঠিটি যদি ভুয়াও হয় তাতেও কারা কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সারা দেশের কারাগারগুলোতে নিরাপত্তার ফাঁকফোকরগুলো চিহ্নিত করার সুযোগ পাচ্ছে।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার সাত জেল সুপারকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগমকে পদাবনতি দিয়ে জামালপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
এ ছাড়া জামালপুরের জেল সুপারকে বদলি করা হয়েছে মেহেরপুর জেলা কারাগারে, বাগেরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. গোলাম দস্তগীরকে চাঁদপুরে, চাঁদপুরের জেল সুপার মো. মাইন উদ্দিন ভূঁইয়াকে কারা অধিদপ্তরে, চুয়াডাঙ্গার জেল সুপার মো. নজরুল ইসলামকে গাইবান্ধায়, মেহেরপুরের জেল সুপার এ এস এম কামরুল হুদাকে বাগেরহাট কারগারে এবং নড়াইল জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মজিবুর রহমান মজুমদারকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে বদলি করা হয়েছে।
এক কারা কর্মকর্তা জানান, কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে কিছুদিন আগে আবু বকর ছিদ্দিক নামের এক কয়েদি পালিয়ে গেছে। ওই ঘটনায় সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগমের অবহেলা পাওয়া গেছে। এ কারণে তাঁকে সেখান থেকে বদলি করা হয়েছে। অন্য ছয়জনকে রুটিনমাফিক বদলি করা হয়েছে।