ভাঙ্গুড়া(পাবনা)প্রতিনিধি: ঘি তৈরির প্রধান উপকরণ গরুর দুধ হলেও পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ঘি তৈরি হচ্ছে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত ঘির গাদ, ডালডা, ভেজাল পাম অয়েল, কৃত্রিম রং ও ফ্লেভার দিয়ে-এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার সকাল ১১টায় উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাসমীয়া আকতার রোজী ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানাটি তালা লাগিয়ে দেন(এই কারখানাটি ঘর ভাড়ায় ব্যবহৃত হচ্ছিল)একই সঙ্গে ঘরের মালিকের হাতে চাবি বুঝে দিয়েছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কারখানার লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শন পুর্বক স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধে রাখার নির্দেশ দেন।
জানাগেছে, একটি হত্যা মামলার অনুসন্ধ্যান করতে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি’র সাথে স্থানীয সংবাদকর্মীরা শনিবার রাতে উপজেলার হারোপাড়া গ্রামে গিয়ে ‘‘আবিদ এন্টার প্রাইজ’’ নামে ঐ কারখানার সন্ধ্যান পান। তখন রাত প্রায় ১১টা। তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। ইউএনও পরের দিন সকালে বিষয়টি দেখতে এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে পাঠাবেন বলে জানান।
রোববার সকালে তিনি জেলা প্রশাসকের মিটিং এ যোগ দিতে পাবনা গমন করেন। এরপর সকাল ১১টার দিকে এসিল্যান্ড সেখানে যান। সেখানে কারখানার মালিক নাইম হোসেন সোহাগ অনুপস্থিত থাকায় কর্মচারীর কাছে কারখানা সম্পর্কে বিশদ বর্ননা শোনেন। এ সময় তার সঙ্গে স্যানেটারী ইনস্পেক্টর নুর মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন। কারখানায় ড্রামগুলো খালি ছিল এবং বাটার ওয়েল ছাড়া অন্যকিছু না পাওয়ায় এসিল্যান্ড ঘরে তালা লাগান এবং ব্যবসার যাবতীয় কাগজসহ কারখানার মালিককে তলব করেন। এসময় কারখানা মালিকের সহযোগী অলিউল্লাহ ও আব্দুর রহিম এর নিকট থেকে একটি মুচলেকা নেওয়া হয়।
সংবাদকর্মীদের ভাষ্যমতে, উপজেলার সদর ইউনিয়নে হারোপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়ির একটি ঘরে স্থাপিত কারখানায় নকল ঘি তৈরির খবর পান। শনিবার (১৯ আগস্ট) রাত ৮ টার দিকে স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা কারখানায় গিয়ে কয়েক মণ ঘি, ডালডা, সয়াবিন, কেমিক্যাল ও ভেজাল দুধ তৈরির সরমজাম দেখেন। তারা ঐসব দ্রব্য নকল বলে সন্দেহ করেন এবং তা পরীক্ষার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
পরে ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আলহাজ¦ মো. রাশিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এর আগেই কারখানার মালিক পার্টনার ওয়ালিদ ও কর্মচারিরা পালিয়ে যায়। ওসি প্রস্তুতকৃত ঘি ও দুধ তৈরির কেমিক্যাল ও মালামাল সন্দেহে কিছু দ্রব্য বাড়ির মালিক আব্দুল খালেক এর জিম্মায় রেখে আসেন।
কারখানার উপস্থিত কর্মচারিরা জানায়, এই কারখানার মালিক মো. নাইম হোসেন (সোহাগ) ভাঙ্গুড়া পৌর সভার পাটুলিপাড়া সরকার পাড়া মহল্লার মো. রোজ এর ছেলে ও ওয়ালিদ হোসেন ময়মনসিং জেলার বাসিন্দা।
এ বিষয়ে নাইম হোসেন সোহাগ এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,তার পিতা খুবই অসুস্থ্য,ক্রিটিক্যাল অবস্থায় রয়েছেন। তাকে নিয়ে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে রয়েছেন। তার কারখানায় নকল ঘি তৈরির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ও ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে তিনি ব্যবসা করছেন। উপজেলা স্যানিটারী ইনস্পেক্টর নুর মোহাম্মদ কয়েকদিন আগেও কারখানা পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি বাটার তৈরিতে স্বল্প পরিমানে ডালডা ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। কারণ ডালডা ছাড়া বাটার সাদা হয়না বলে তিনি জানান। আবার কোনো কোম্পানির অর্ডারে তারা ক্রিম ওয়েলের সাথে বাটার ওয়েল ব্যবহার করে থাকেন বলেও জানান।
তিনি নকল ঘি তৈরি করছেন এবং এজন্য প্রশাসনকে মাসওহারা দিচ্ছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,প্রশ্নই আসেনা। বরং তার ব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি)তাসমীয়া আকতার রোজী বলেন,উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কারখানার মালিককে না পাওয়ায় ঘরটি তালাবদ্ধ করা হয় এবং ব্যবসার বৈধ কাগজপত্রসহ কারখানার মালিককে অবিলম্বে ইউএনও’র কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। তখন অবশ্য কারখানায় কোনো অবৈধ মালামাল পাওয়া যায়নি। তবু কারখানায় অবৈধ দ্রব্য সামগ্রী বা ক্ষতিকর কেমিক্যানের সন্ধ্যান মিললে তা পরীক্ষার জন্য স্যানিটারী ইনস্পেক্টরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্যানিটারী ইনস্পেক্টর নুর মোহাম্মদ বলেন, প্রতিষ্ঠানের মালিক এলে কারখানা খোলা হবে এবং তখন সেখানে ব্যবহৃত ক্ষতিকর উপকরণ পেলে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। রিপোর্টে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন দ্রব্য মিললে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান জানান,জনৈক সাংবাদিক শনিবার রাতে ফোনে বিষয়টি তাকে জানান। দিনব্যাপি পরিশ্রমে খুবই ক্লান্ত থাকায় সকালে এসিল্যান্ডকে পাঠানোর কথা তিনি জানিয়েছিলেন। এছাড়া এসিল্যান্ডের ছোট বাচ্চা ! এজন্য গভীর রাতের পরিবর্তে সকালে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য তিনি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন বলেও জানান।।