1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন

আজ বিদেশের মাটিতে স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন হোসেন আলী

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৩
  • ১০৬ সময় দর্শন

মাহবুব-উল-আলম, ভাঙ্গুড়া.
আজ ১৮ এপ্রিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিন বিদেশের মাটিতে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয় আজ। পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়ার গর্বিত সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. হোসেন আলী ভারতে ঐ পতাকা উত্তোলন করেন। তখন তিনি কলকাতায় পাকিস্তান দূতাবাসে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।


১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকার শপথ নেওয়ার ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। পরের দিন ১৮ এপ্রিল এম হোসেন আলী তার মিশনের ৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের আনুগত্য ঘোষণা করেন। ফলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ঘটে যায় বড় এক ঘটনা। সেই সঙ্গে তিনি দূতাবাস ভবনের শীর্ষ থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ান। এর পরই উপহাইকমিশনের নাম পালটে করা হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, কূটনৈতিক মিশন’।

এর আগে ১৭ এপ্রিল হোসেন আলী সন্ধ্যা ৭টায় নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে মিশনে ফিরে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে তিনি বাঙালি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এদের মধ্যে প্রথম সচিব রফিকুল ইসলাম, তৃতীয় সচিব আনোয়ারুল কবির চৌধুরী ও কাজী নজরুল ইসলাম এবং সহকারী প্রেস অ্যাটাসে বা প্রেস সচিব মকসুদ আলী ছিলেন। তারা অস্থায়ী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল সকাল ৭টার দিকে হোসেন আলীসহ বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাইকমিশনে সমবেত হন। সবার সামনে হোসেন আলী বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন করেন এবং উপহাইকমিশনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দেন। তবে এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরিণ বিষয় হওয়ায় পরে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হবে কি না- কতিপয় অফিসারের এমন ভাবনায় পতাকা উত্তোলনে কিছুটা বিলম্ব হয়। এর মধ্যে হোসেন আলী দুবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করেন।

অবশেষে সকল দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে দুপুর ১২টায় পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে ঐ ভবনের নির্দিষ্ট স্থানে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন এম. হোসেন আলী। এই ঘটনা পাকিস্তানের ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করে।

এম.হোসেন আলীর পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে বিএসএফের সদস্যরা পাকিস্তানের উপ-হাইকমিশনের নাম ফলক সরিয়ে বাংলাদেশের নাম ফলক লাগিয়ে দেন। তখনি হোসেন আলী উপ-হাইকমিশনের অফিস থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও কবি ইকবালের ছবি নামিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছবি ঝুলিয়ে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এ খবর ছড়িয়ে পড়ে কলকাতা শহরে। তারপর দলে দলে মানুষ আসতে থাকে বাংলাদেশ মিশনে।

কানাডা প্রবাসী এম. হোসেন আলীর দুই মেয়ে জলি আলী ও ইয়াসমিন আলীর বর্ণনা অনুযায়ী বাইরে থেকে সংগ্রহ করা পতাকা বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অতঃপর হাতে কাপড় কেটে বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করা হয় এবং তা পতাকার মাঝে সেলাই করে তারা বসিয়ে দেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এটা ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা। যা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। তখন থেকে এম. হোসেন আলী ভারতে বাংলাদেশ মিশনের প্রথম প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন এবং স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত তিনি ঐ পদে কর্তব্যরত ছিলেন।

যুদ্ধকালীন সময়ে সেদেশে বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রের ব্যবস্থাসহ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সরকারের সক্রিয় সহায়তা পেতে এম.হোসেন আলী অস্থায়ী সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করেন। তিনি প্রতিনিয়ত ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ভারতীয় সরকারের কূটনৈতিক ও আর্থিকসহ সকল সহায়তা প্রদানে তৎপর থাকেন।

পাবনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট শাহআলম ও পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন (জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বলেন,“ এম.হোসেন আলীর আত্মীয় ও এলাকার মানুষ হিসোবে আমরা কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে গিয়ে প্রথমে তাঁর বাসায় উঠি।

একজন দেশপ্রেমিক হিসাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সেদিন তাঁকে যেভাবে কাজ করতে দেখেছি তা চীর স্মরনীয় হয়ে থাকবে। তাঁর সঙ্গে কিছুদিন থাকাকালে কলকাতার নিকটবর্তী কেচুয়াডাঙ্গা, জলঙ্গী, বহরমপুর প্রভৃতি শরণার্থী শিবির, গেরিলা শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে হোসেন এম. আলীকে সারাক্ষণ কর্মব্যস্ত থাকতে দেখেছি। তার সহধর্মিণী ফয়জুন্নেছা আলী সবসময় হোসেন আলীর পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। বিজয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি দেশের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন।” এই দুই মুক্তিযোদ্ধা ও হোসেন আলীর পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

১৯৭৩ সালের জানুয়ারিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হোসেন আলীকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেন। এ সময় যুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার মনোভাব ইতিবাচক করতে এবং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও সহযোগিতা প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন । (তথ্য সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, হোসেন আলীর পারিবারিক সূত্র ও বাংলাদেশ গেজেট)।
এম. হোসেন আলী ১৯২৩ সালের ১ ফেব্রæয়ারি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালের ২ জানুয়ারি কানাডার অটোয়াতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে বাংলাদেশে তার পৈতৃক স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও গরিব মানুষের কল্যাণে ওয়াক্ফ করে গেছেন । মরহুম এম. হোসেন আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছিলেন (সূত্র: বাংলাদেশ গেজেট জানুয়ারি ৬, ১৯৮১) ।
১৮ এপ্রিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘পররাষ্ট্র দিবস’ হিসেবে উদযাপন করছে। ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন মুক্তিযুদ্ধে অতীব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এম.হোসেন আলী। এখানে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীর নামে একটি আধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে।

এম. হোসেন আলী স্মৃতি পরিষদ পারভাঙ্গুড়ায মরহুমের গ্রামের বাড়িতে দিনটি উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার জানিয়েছেন।।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host