দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১-৪৫ সালে বার্মায় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কুমিল্লা একটি মফস্বল শহর হওয়া সত্ত্বেও যুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ন সামরিক ঘাটিতে পরিণত হয়। ১৪ আর্মির সেনানায়ক ফিল্ড মার্শাল উইলিয়াম জোসেফ স্লিমের কমান্ড পোস্টও ছিলো কুমিল্লার ময়নামতি তে। তাই সেখানে স্থাপিত হয় একটি বড় হাসপাতাল, যুদ্ধ-সরঞ্জাম সরবরাহ ক্ষেত্র ও বিমান ঘাঁটি।
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির: এই সিমেট্রির অবস্থান কুমিল্লা শহর থেকে ৭ কিমি দূরে ময়নামতিতে। কুমিল্লা সেনানিবাসের সিএমএইচ এর পিছন গেট সংলগ্ন কিছুটা উত্তরে অবস্থান। এই সমাধিক্ষেত্রে শায়িত আছেন ৭৩৭ জন যোদ্ধা। যাদের মধ্যে ৫৬৭ জন সৈনিক, ১৬৬ জন বৈমানিক এবং ৩ জন নাবিক। এছাড়া একটি কবর সেখানে আগে থেকেই ছিল। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই নিকটস্থ হাসপাতালগুলোতে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু শহীদদের কবর সেখানে স্থানান্তর করা হয়। সৈনিক থেকে আরম্ভ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার সেনা সদস্যদের সমাধি রয়েছে এখানে।
এখানে সমাহিত শহীদদের মধ্যে যেসব দেশের বাহিনীর যোদ্ধা ছিলেন এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, অবিভক্ত ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান) ১৭৮ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ জন, জাপানের ২৪ জন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার ১২ জন করে, নিউজিল্যান্ডের ৪ জন, রোডেশিয়ার ৩ জন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা, বার্মা, বেলজিয়াম এবং পোল্যান্ড থেকে এক জন করে।
অনেকের ধারণা সেখানে শুধুমাত্র খ্রিষ্টানদের সমাধিক্ষেত্র। কিন্তু মূলত এটি দুই ভাগে বিভক্ত। সামনের অংশটিতে অর্থাৎ ক্রুশের সামনে খ্রিষ্টান সৈনিকদের সমাধি।প্রতিটি কবরেই রয়েছে ধাতব ফলক। প্রতিটি ফলকেই নাব, বয়স, বাহিনী, পদবির পাশাপাশি নানান অর্থবহ উক্তি লেখা। সমাধিক্ষেত্রটির উপরে একটি বড় ক্রুশ রয়েছে। আর ক্রুশের পেছনের দিকটায় একটু সামনদের দিকে আগালেই চোখে পড়বে মুসলিম সৈনিকদের সমাধি। যেখানে প্রতিটি কবরের ফলকে নামের সাথে আরবি হরফে লেখা “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” মুসলিম শহীদদের মধ্যে অধিকাংশই ব্রিটিশ ভারত বাহিনীর।
তবে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সাতজন সমাহিত হন এই সিমেট্রিতে। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ির তেলপারইয়ের আবদুল রহমান এবং সাতকানিয়ার রূপকানিয়ার ফজল কবির, নোয়াখালীর কবিরহাটের লামছির আবদুল হক ও স্বর্ণাবাদের দলিলুর রহমান, লক্ষ্মীপুরের (তৎকালীন নোয়াখালী) রামগঞ্জের করপারার ফজল রহমান ও সদরের পশ্চিম লক্ষ্মীপুরের আবদুল খালেক এবং রাঙামাটির মোখলেস রহমান।
সমাধিক্ষেত্রটির দেখাভালের দায়িত্বে রয়েছে কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন (সিডব্লিউজিসি)। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সব ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সংগৃহিত – মাহবুব-উল-আলম