জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুম এলেই পাকিস্তানে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ধ্বংসাত্মক পাহাড়ি ঢলের ফলে মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায় ঘরবাড়ি ও খেত খামার। এবারের বর্ষাতেও পাকিস্তানে ভয়াবহ আকারে বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রায় তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। খবর সিএনএন
জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় দেশটিতে অন্তত ৫০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেকই শিশু। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বাড়িঘর ধ্বংসের ফলে। যারা বেঁচে আছেন তারা এখন মারাত্মকভাবে পানিবাহিত রোগে ভুগছেন।
২৫ কোটি মানুষের আবাসস্থল পাকিস্তান বিশ্বের মধ্যে জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। যদিও দেশটি বৈশ্বিকভাবে মাত্র ০.৫ শতাংশ তাপ উৎপাদন করে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তের দিক থেকে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে।
চলতি বছরের মধ্যে গত সপ্তাহে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় ১৮০ জনের মৃত্যু হয়। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। বেশি ভাগ মৃত্যু হয় উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়াতে।
দুঃখজনকভাবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা একের পর এক বন্যার পাকিস্তানে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
জুলাই মাসের মাঝামাঝি পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবে তীব্র বর্ষণ হয়, গ্রামগুলো তলিয়ে যায় এবং মাঠ পানির নিচে চলে যায়।
এছাড়া ইসলামাবাদের কাছে অবস্থিত রাওয়ালপিন্ডি শহরে প্রায় ৯ ইঞ্চি বৃষ্টি পড়ে, যা রাস্তাগুলোকে প্রবহমান নদীর মতো বানিয়ে দেয়, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কিছু এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
পাকিস্তান একটি হিমবাহ সমৃদ্ধ দেশ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাচীন বরফের নদীগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে, যা বন্যার ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।
পাকিস্তানই নয়, ভারতের শাসিত কাশ্মীরেও বন্যার তাণ্ডব চলছে। হিমালয়ের শহর চাশোতিতে কমপক্ষে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২০০ এর বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে পানির একটি প্রবাহ হিমালয়ের উত্তর ভারতের ধরালি গ্রামে ঢুকে পড়েল সেখানে চারজনের মৃত্যু হয় এবং নিখোঁজ হয় বহু মানুষ।
এর আগে ২০২২ সালে বর্ষা মৌসুমে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় ১৭০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ঘরবাড়ি ছাড়া হয় হাজার হাজার মানুষ। প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির ক্ষতি হয়।
সূত্র চ্যানেল টুয়েন্টিফোর