মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই খবর দিয়েছে। জানিয়েছে, এর ফলে, সমূহ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ওই এলাকা দিয়ে প্রদক্ষিণরত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহগুলির গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের। ব্যাহত হতে পারে ওই এলাকার টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ ও নেভিগেশন ব্যবস্থাও।
গত শতাব্দীর সাতের দশক থেকেই পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রটি দুর্বল হয়ে পড়তে শুরু করে। তখনই এই চৌম্বক ক্ষেত্রে একটি বড়সড় ফাটল দেখা দেয়। যার নাম- ‘সাউথ আটলান্টিক অ্যানোমালি (এসএএ)’। এই ফাটলটি রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ অতলান্তিক মহাসাগরের উপরে থাকা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে।
নাসার সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত ৫০ বছরে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা ও দক্ষিণ অতলান্তিক মহাসাগরের উপরে থাকা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ফাটলটা আকারে আরও বড় তো হয়েইছে, এমনকী, তা ভেঙে গিয়ে দু’টুকরো হয়েছে। তৈরি হয়েছে দু’টি বড় বড় ফাটলের।
নাসা দেখেছে, ‘‘পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ফাটলটা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে পশ্চিম দিকে। আর ওই এলাকার চৌম্বক ক্ষেত্রটি ক্রমশই কমজোরি হয়ে পড়ছে।’’
নাসার তরফে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এর ফলে, ওই এলাকায় আগামী দিনে সমূহ বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। যাঁরা ওই এলাকায় বসবাস করেন, তাঁদের উপর সৌরকণা, সৌর বিকিরণ ও মহাজাগতিক রশ্মির হানাদারি ঠেকানোর প্রাকৃতিক চৌম্বকীয় ‘ঢাল’টি যথেষ্টই কমজোরি হয়ে পড়েছে। এর ফলে, ওই এলাকা দিয়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণরত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, কৃত্রিম উপগ্রহগুলির গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ভয়ঙ্কর ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে সৌর বিকিরণ ও মহাজাগতিক রশ্মির ঝাপ্টায়।
এর আগে মে মাসে ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)’ জানিয়েছিল, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র গত ২০০ বছরে ৯ শতাংশ কমজোরি হয়ে পড়েছে। আর সেই চৌম্বক ক্ষেত্রের যে এলাকায় ফাটলটি আকারে বেড়েছে ও সেটি ভেঙে দু’টুকরো হয়েছে, সেখানে চৌম্বক ক্ষেত্র গত ৫০ বছরে ৮ শতাংশ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের এই ফাটল-বৃদ্ধির কারণটা অবশ্য ভূ-প্রাকৃতিক। পৃথিবীর একেবারে অন্দরে গলিত লাভাস্রোত আর চৌম্বক অক্ষ একটু বেশি ঝুঁকে থাকার জন্যই এই ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে ও বৃদ্ধি ঘটছে। পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুদু’টি সঠিক ভাবে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণে নেই বলেও ফাটল বেড়ে চলেছে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে। সূত্র : আনন্দবাজার