প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ কখনোই ছাত্রলীগ করেননি, সব সময় সরকার ঘেষাই ছিলেন। তিনি ব্যারিস্টারি পাস করে ৬৯ সালে বাংলাদেশে আসেন। কবি জসিম উদ্দিনের জামাতা হিসেবে সবসময় তার প্রতি একটা সহানুভূতি ছিল। কিছু কিছু কাজ সবসময় তার ভিন্ন ধরনের ছিল। যার কারণে ৭৩ সালে তাকে একবার গ্রেফতারও করা হয়। কারণ (মওদুদ) বাংলাদেশের কিছু গোপন তথ্য পাচার করেছিলেন।’
‘এজন্য কবি জসিম উদ্দিন সাহেব এসেছিলেন আমাদের বাসায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছে অনুরোধ করলেন যেন তাকে (মওদুদ) মুক্তি দেয়া হয়।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব বলেন শেখ হাসিনা।
কোনো এমপি মারা গেলে সংসদে শোক প্রস্তাব আনার পর আলোচনার রেওয়াজ রয়েছে। গত অধিবেশন শেষ হওয়ার পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ অনেকে মারা গেছেন। প্রসঙ্গক্রমে তাদের নিয়েও আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারিমন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।
মওদুদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয় মওদুদ ইসলাম তখন নিয়োগভুক্ত আইনজীবী ছিলেন না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার এখনো মনে আছে যখন আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডাকল, বঙ্গবন্ধুকে যখন প্যারোলে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব হলো। তখন সে প্রস্তাব আমার মা প্রত্যাহার করে বলেছেন-মামলা প্রত্যাহার করে যেন মুক্ত মানুষ হিসেবেই তাকে (বঙ্গবন্ধু) জামিন দেয়া হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মেসেজটা আমি পৌঁছে দিয়েছিলাম আমাদের নেতাদের কাছে। তখন আমাদের বাসায় ব্যারিস্টার মওদুদ এবং আমিরুল ইসলাম আসেন। ব্যারিস্টার আমিরুল হোসেন বলেছিলেন, “তুমি কেমন মেয়ে পিতার মু্ক্তি চাও না?”। তার এ কথায় ব্যারিস্টার মওদুদ সায় দিয়েছিলেন। তখন আমি বলে দিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসবেন। আপনারা বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।’
মওদুদ সম্পর্কে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তিনি মুখে যাই বলুক তার লেখায় নিজের আপন মাধুরি মিশিয়ে কিছু লিখেছেন। তারপর আমি বলব- তিনি সবসময় দলবদল করতে পছন্দ করতেন। তিনি সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি ছিলেন। এরশাদ রাষ্ট্রপতি হয়ে তাকে মন্ত্রিত্ব দিলেন। তার মধ্যে একটা ট্যালেন্ট ছিল। কিন্তু সেই ট্যালেন্ট যদি দেশপ্রেমের কাজে লাগাতেন তাহলে ভালো হতো।’
এর আগে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেখ রাসেলের জন্মদিন তিনি যথাযথভাবে পালন করেছেন প্রতিবছরই। আজ তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। গত কয়েকদিন আগেও কথা বললাম। তিনি সবসময় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। যখনই আমি শুনলাম তিনি অসুস্থ আমি চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে নিতেই তিনি চলে গেলেন। বিষয়টা খুবই দুঃখজনক।
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগ করেছেন, বিভিন্ন সংগঠন করেছেন, বিদেশে পড়াশোনা করেছে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সবগুলো সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক সচেতন একজন মানুষ।’
এইচটি ইমাম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আমলা হলেও রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। তিনি আন্দোলন-সংগ্রামে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতেন।’