মাহবুব-উল-আলম,ভাঙ্গুড়া(পাবনা) থেকে :
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে একটি প্রতিবন্ধী স্কুল। এখানে স্বপ্রণোদিত হয়ে শিশুদের পাঠদান করছেন এলাকার শিক্ষিত কতিপয় যুবক। উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের খানমরিচ গ্রামে স্কুলটি স্থাপন করেছেন মামুনুর রশিদ নামের স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী এক যুবক।
জানা যায়, ২০১৭ সালে মামুনুর রশিদ কর্তৃক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হবার পর তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে শিক্ষকতা পেশায় এগিয়ে আসেন আফসানা মেমী ও মুন্নি পারভিনসহ বিশ যুবক-যুবতী। বর্তমানে এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০৭জন। এরা সবাই এলাকার দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ইশারা ও ডিজিটাল উভয় পদ্ধতিতে এসব বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়। এছাড়া এখানে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিবন্ধী সেবা ও মাদক নিরাময় যুব সংস্থা।
শিক্ষিকা আফসানা মেমী ও মুন্নি পারভিন বলেন,উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর অসহায় শিশুদের লেখাপড়ায় সহযোগিতা দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি কিন্তু চার বছরেও ভাতার ব্যবস্থা না হওয়ায় আমরা কষ্টে আছি।
প্রধান শিক্ষক সুমন রানা বলেন,বিদ্যালয়টি চালাতে আমাদের শিক্ষকদের খুব কষ্ট হচ্ছে তবুও হাল ছাড়িনি। আমরা চারবছর ধরে এখানে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছি। শিক্ষকদের অনেকেরই আর কোনো পেশাও নেই। করোনাকালিন সময়ে কিছু শিক্ষক চলেও গেছেন। সরকার আর্থিক অনুদান বরাদ্দসহ এদিকে সুদৃষ্টি দিলে আমাদের কাজে উৎসাহ ও স্বক্ষমতা দুটোই বৃদ্ধি পেত।
বিদ্যালয়ের অন্যতম পরামর্শক প্রভাষক মো: শহিদুল ইসলাম বলেন,এই এলাকায় শতাধিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু রয়েছে। তাদের বেশির ভাগ অভিভাবক দরিদ্র তাই এসব শিশুদের দেশের নামি-দামি কোনো স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব নয় – এ কথা ভেবেই বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়।
বিদ্যালয়ের পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান,শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মেধা বিকাশে তারা কার্যক্রমটি চালাচ্ছেন। তবে ওই শিশুদের যুগোপযোগি শিক্ষায় শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। এছাড়া শিশুদের পাঠ্যবিষয়ের সহায়ক হিসাবে মূল্যবান কিছু যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রয়োজন। এজন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদান কামনা করি। তিনি বিদ্যালয়টি সরকারি নিবন্ধনের জন্য সকল শর্ত পূরণ করে ইতোমধ্যে অনলাইনে আবেদন করেছেন বলেও জানান।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো: জাহিদুল ইসলাম কার্যক্রমটিকে মহৎ উদ্যোগ উল্লেখ করে বলেন,এই স্কুলের ছয় বছরের বেশি বয়সের প্রতিবন্ধী শিশুকে ভাতা দেওয়া হয়। তবে শিক্ষকদের ভাতা প্রদানের এখতিয়ার তাদের নেই বলে তিনি জানান।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার(ভারপ্রাপ্ত)মো: সেলিম রেজা বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই শিশুদের সরকারি বই দেওয়া হয় কিন্তু বিদ্যালয়টির গঠন ও শিক্ষার্থীর ধরন ভিন্নতর হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সরকারি ¯স্বীকৃতির ব্যাপারে তারা সহযোগিতা করতে পারছেন না বলে দু:খ প্রকাশ করেন।
এদিকে প্রতিবন্ধী শিশু রোকসানা খাতুনের মা জোবেদা খাতুন ও প্রতিবন্ধী শিশু আব্দুল আলিমের মা খাদিজা খাতুন বলেন আমাদের এসব অসুস্থ বাচ্চাদের নিয়ে খুবই দু:শ্চিন্তায় আছি। যদিও এদের মেধা বিকাশের পাশাপাশি শিক্ষকরা কিছু সেবামুলক কাজও করছেন কিন্তু তা খুবই অপ্রতুল। এজন্য স্কুলটি সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিতে প্রয়োজনীয় আদেশ দানের জন্য তারা জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবি জানিয়েছেন।