1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৮:৩৭ অপরাহ্ন

আলেম হওয়ার স্বপ্ন ছিল শহীদ আবদুল্লাহর

ডিডিএন ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫
  • ৫ সময় দর্শন

মাত্র ১৩ বছর বয়সেই কোরআনের ১২ পারা মুখস্থ করে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে মুন্সীগঞ্জের পাথরঘাটা বড় কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিল আহমদ আবদুল্লাহ। একজন আলেম হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার।

কিন্তু ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই সেই স্বপ্ন এক মর্মান্তিক ট্রাজেডিতে পরিণত হয়। সেদি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় সে।

স্বৈরচার শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে যখন দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে ওঠে, পাথরঘাটা মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র আবদুল্লাহ  তখন আর নিজেকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি।

তার পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৮ জুলাই সকালে কাউকে না জানিয়ে সে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে এবং জোহরের নামাজের পর বাসে করে সরাসরি কাজলায় গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়।

আবদুল্লাহর বাবা মো. মনিারুজ্জামান সেই বিভীষিকাময় রাতের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘১৮ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি ফোন পাই। এক ছাত্র জানায়, আবদুল্লাহকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাজলার অনাবিল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।  আমরা জানতামই না যে সে ঢাকায় এসেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও আবদুল্লাহকে হাসপাতালে নেওয়া ছাত্রদের বরাতে তিনি জানান, ‘আবদুল্লাহ ছিল আন্দোলনের সামনের সারিতে। এসময় ছয় রাউন্ড গুলির শিকার হয় সে। তিনটি রাবার বুলেট লাগে তার বুকে এবং তার বাঁ হাত, কোমর ও পায়ে তিনটি তাজা গুলি বিদ্ধ হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম গুলি তার পায়ে লাগার পরও সে রাস্তা ছাড়েনি। বরং প্রতিবাদ চালিয়ে যায়। এরপর আরও গুলি লাগলে সহপাঠীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

হাসপাতালে নেওয়ার পর সহযোদ্ধারা তার কাছ থেকে মায়ের ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করে। মণিরুজ্জামান বলেন, ‘ছেলে তখনও জ্ঞান হারায়নি। মায়ের নম্বর দিয়ে দেয়। কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর আমি জানতে পারি, তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, ঢাকায় এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছতেও প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হতে হয়— শহরজুড়ে ছিল ব্যারিকেড আর গুলির শব্দ।’আমরা ইমার্জেন্সি বিভাগে পৌঁছি। সেখানে গুলিবিদ্ধদের আর্তনাদ আর অনেক মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখি । কিন্তু তখনও আমি আমার ছেলেকে খুঁজে পাইনি।’

পরে হাসপাতালের এক স্টাফের সহায়তায় পাশের একটি কক্ষে ছেলেকে খুঁজে পান তিনি। ‘আমার ছেলের নিথর দেহ দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলি। অনেকক্ষণ কাঁদার পর স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলি— আমাদের ছেলে আর নেই। তার জন্য দোয়া করো।’

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পুলিশের অনুমতি ও আইনি প্রক্রিয়ার কারণে এরপরও লাশ ফেরত পেতে আরও দুই দিন অপেক্ষা করতে হয়, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমি ছেলের মরদেহ দাবি করি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ পুলিশের অনুমতি লাগবে। তারা একটা কাগজ দিয়ে যত্রাবাড়ী থানায় যেতে বলে।’ কিন্তু সেখানে গিয়েও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

মণিরুজ্জামান বলেন, ‘রাত ১টা ৩০ মিনিটে এক পুলিশ বলে, ফিরে যান। দাঁড়িয়ে থেকে কিছু হবে না। সকালে (১৯ জুলাই, শুক্রবার) ১০টায় আসেন।’ পরে তারা আবার হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ মর্গে রাখার ব্যবস্থা করেন।

পরদিন শুক্রবারেও গুলিবর্ষণ চলতে থাকায় থানায় ঢুকতে পারেননি তারা। ‘২০ জুলাই সকালে আবার থানায় যাই। তখন এক পুলিশ জানায়, একজন অফিসার ঢাকা মেডিকেলে গেছেন, ওখানেই যান।’ বলেন মনিরুজ্জামান।সেদিন বিকেলে পোস্টমর্টেম শেষে তারা ছেলের মরদেহ গ্রহণ করেন এবং আসরের নামাজের পর মাতুয়াইল কবরস্থানে দাফন করেন।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সন্তান আবদুল্লাহ ছিল তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় বোন মরিয়ম বিবাহিত। ছোট ভাই আনাস (৭) যাত্রাবাড়ীর শেখদীতে একটি মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।মণিরুজ্জামান মৌসুমি ব্যবসা করে পরিবার চালান।

আবদুল্লাহ ছিল মায়ের খুব আদরের, খুবই যত্নবান, সাহায্যকারী। তার মা আমেনা বলেন, ‘ছেলে আমার ফুলের টবের মাটি এনে দিত। ঘরের প্রতিটি কোনায় তার স্মৃতি।’আমেনা বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই মনে হয়, আমার ছেলে মাটির নিচে ভিজে যাচ্ছে। কী যে কষ্ট লাগে সেটা বলে বোঝানো যাবে না।’

সাত বছর বয়সী আনাস ভাইয়ের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছে। ‘ভাইয়া আমায় চিপস কিনে দিত, জুস কিনে আনত। সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে খেলত। এখন খুব মনে পড়ে।’পরিবারটি এই হত্যার বিচার ও দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চায়।

মণিরুজ্জামান বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, শেখ হাসিনাসহ তাদের ফাঁসি চাই। বিচার এমন হওয়া উচিত যেন কেউ আর কাউকে এভাবে খুন করতে না পারে ।

সূত্র: বাসস।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host