সংবাদ ডেস্ক: ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো বাংলাদেশেও সংক্রমণ বেড়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা মাঝে কিছুটা কমার পর গত কয়েক দিনে ২৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। আইইডিসিআরের তথ্য অনুসারে, যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে বেশি মারা গেছে ফুসফুসের সংক্রমণে। এর পরই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে।
এদিকে আবার বেড়েছে চিকিৎসকের মৃত্যুও। গত কয়েক দিনে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও চিকিৎসক মারা গেছেন, যেমনটা ঘটেছিল জুন-জুলাই মাসের দিকে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) হিসাব অনুসারে ১৫ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১১৫ জন চিকিৎসকের মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে ১ ডিসেম্বর থেকে সোমবার পর্যন্ত মারা গেছেন আটজন।
বিএমএর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, চিকিৎসকদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদেরও এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার না করে এখন কোনো রোগী দেখা ঠিক হবে না। রোগীদেরও চিকিৎসকদের সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সরকারের জায়গা থেকেও এ ক্ষেত্রে নজরদারি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকরা অনেকেই এখন রোগীর চাপ সামলাতে ও চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মৃত্যুর মুখে পড়ছেন যাঁদের মধ্যে বড় একটি অংশ নিয়মিত হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা দেওয়ায় নিয়োজিত ছিলেন, রোগীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। বর্তমান অবস্থাকে অনেক হাসপাতালে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসামগ্রীর ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার কুফল বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
বিএমএর তালিকা অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি হলেও ৩০ থেকে ৫০-এর মধ্যে বয়সের চিকিৎসকও মারা গেছেন একেবারে কম নয়। বিশেষজ্ঞরা সরকারি ও বেসরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যার যার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর নজর দিতে বলেছেন। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের প্রতি পরামর্শ দিয়ে তাঁরা বলেছেন, হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে অবশ্যই আরো বেশি সতর্কতামূলক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা কার্যকর করা দরকার।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন বলেন, চিকিৎসকরা রোগীর সেবা দিতে গিয়ে নিজেরা অসতর্ক থাকায় সংক্রমিত হয় অনেকে মৃত্যুর মুখে পড়েন। এ ক্ষেত্রে রোগীরা অনেকেই তাদের করোনা উপসর্গ গোপন রাখে কিংবা হয়তো জানেই না যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আছে। আবার ঠিকমতো অনেকে মাস্ক ব্যবহার করে না। পাশাপাশি চিকিৎসকরা যে মাস্ক ব্যবহার করেন তা কতটা নিরাপত্তা দিচ্ছে না দিচ্ছে সেটাও বিবেচনায় রাখা দরকার।
ড. তাহমিনা বলেন, নিজেকে সুরক্ষিত রেখে তারপর রোগী দেখা উচিত। নিজের নিরাপত্তা বজায় না রেখে রোগী দেখতে গিয়ে যেমন চিকিৎসকরা নিজের বিপদ ডেকে আনছেন, তেমনি তাঁর পরিবারের বিপদ ডেকে আনছেন এবং সর্বোপরি অনেক রোগী তাঁর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সব হাসপাতালে চিঠি দিয়েছি চিকিৎসকসহ অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীর সুরক্ষা কার্যকর রাখার জন্য। আমাদের সুরক্ষাসামগ্রীর এখন আর কোনো ঘাটতি নেই। প্রয়োজনে আমরা আরো সুরক্ষাসামগ্রী দেব; কিন্তু কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীদের ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।’
এদিকে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘করোনায় মৃত্যুর পর্যালোচনা কাজ এখনো চলছে। তবে সর্বশেষ তথ্য অনুসারে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে। এর পরই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে। ফলে যাদের মধ্যে আগে থেকেই ফুসফুসের সংক্রমণ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ রয়েছে তাদেরকে অন্যদের তুলনায় বেশি সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। পরিবারের সদস্যদেরও এসব রোগীর বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।’