পাবনার ফরিদপুরে যত্নে উৎপাদিত আলু ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকেরা। সরেজমিনে ফরিদপুর ও পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি আলুর খুচরা মূল্য ২০ টাকা। অথচ প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচও ২০ টাকা বলে জানা গেছে। ফলে লাভ ক্ষতির হিসাব মিলাতে না পেরে আলু ফেলে দিতে হচ্ছে কৃষকদের।
উপজেলার বৃলাহিড়ীবাড়ি গ্রামের আলু চাষী মোঃ সাইদুর রহমানের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, তিনি এ বছর ২২ শতক জমিতে আলু চাষ করেন। বীজ, সার ও শ্রমিকের মজুরি থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে তার ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আলু উৎপাদন করেছেন ৭০ মন বা ২৮০০ কেজি। বর্তমান বাজার অনুযায়ী তার উৎপাদন খরচ এবং আলুর খুচরা বাজার মূল্য সমান। তবে আলুর পাইকারি মূল্য আরো কম। তার ভাষ্যমতে, বর্তমানে আলুর পাইকারি মূল্য প্রতি মন (৪০ কেজি) ৫২০ টাকা। বাজার ঘুরেও সত্যতা মেলে তার বক্তব্যের। সে হিসাব করলে দেখা যায় তার প্রতি কেজিতে ৭ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। যার ফলে বিক্রি করতে না পারায় আলু পঁচে যাচ্ছে এবং সেগুলো ফেলে দিতে হচ্ছে।
কোল্ড স্টোরেজে রাখা যেত কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিকটতম কোল্ড স্টোরেজ পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী উপজেলায় এবং পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত। সেখানে আলু সংরক্ষণ করতে চাইলে প্রতি বস্তা আলুর (৬০ কেজি) সংরক্ষণ খরচ ৪৫০ টাকা এবং পরিবহন খরচ ২২০ টাকা। অর্থাৎ সংরক্ষণ করতে চাইলে প্রতি কেজি আলুর জন্য প্রায় ১১ টাকা খরচ হবে। বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে বিবেচনা করলে এটি প্রায় দ্বিগুণ ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই কারণে তিনি আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না। ফলে আলু পঁচে যাচ্ছে আর সেগুলো ফেলে দিতে হচ্ছে। একই ধরনের বক্তব্য দেন একই গ্রামের মোঃ শাহ আলম, মোঃ শওকত আলী সহ আরো অনেক আলু চাষী।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ জোবায়ের হোসেন বলেন বলেন, ” আলু চাষের জন্য জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলা বিখ্যাত হলেও পিছিয়ে নেই পাবনা জেলা। কিন্তু সংরক্ষণাগার ও ভালো বীজের অভাবে কৃষক ভাইয়েরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় পর্যাপ্ত কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন, স্টোরেজে সংরক্ষণের জন্য মূল্য নির্ধারণ ও মানসম্মত বীজ সরবরাহ করা গেলে কৃষক ভাইয়েরা আলুর সঠিক মূল্য পেতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এর বাস্তবায়ন হলে কৃষকেরা উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরান বলেন, ” ফরিদপুর উপজেলায় মোট ৭০ হেক্টর আলুর চাষাবাদ হয়। বিগত বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো। তবে বাজারে কিছুটা দাম কম কারণ এখন আলুর যেহেতু সরবরাহ বেশি। ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় কোনো সংরক্ষণাগার না থাকায় কৃষককে বাধ্য হয়ে আলু মাঠ থেকে তোলা মাত্র বাজারে বিক্রি করতে হয়। ফলে বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমে যায়।”
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার মত তিনিও মন্তব্য করেন, সরকারী উদ্যোগে আলুর সংরক্ষণার নির্মাণ করলে কৃষকেরা ভালো দাম পাবে ও আলু চাষে আগ্রহী হবে। সরকারি অনুদান বা তাদের ক্ষতি কমিয়ে দিতে পারে এমন সরকারি উদ্যোগের আকাঙ্ক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ
এনএইচ