1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১২ অপরাহ্ন

প্রতিবেদকের নাম :
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩ সময় দর্শন

অনলাইন ডেস্ক :

‘অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন চলছে। পরিবারের সদস্যদের আশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। মাসিক বেতন নির্ভর করে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও টিউশন ফি-এর ওপর। ফলে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে গেলে তাদের আয়ও ব্যাপকভাবে কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মাস শেষে ন্যূনতম জীবনধারণের মতো অর্থও পান না শিক্ষকরা। অভাবের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেক শিক্ষককে দিনমজুরের কাজ করতে হচ্ছে। কেউ চালাচ্ছে অটোরিকশা, কেউ করছে ফুটপাতে ফলের ব্যবসা।’

অনেকটা আক্ষেপ করে গতকাল ইত্তেফাককে এ কথাগুলো বলেন বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিষদের চেয়ারপার্সন অধ্যক্ষ মো. জমির উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, বেতন ছাড়া চাকরি করতে গিয়ে তাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সংসারে অভাব অনটন তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে ৬৬ হাজার ২৮৭টি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ শিক্ষক বেতনহীন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে নামমাত্র বেতনে শিক্ষকদের টিকে থাকা যেন এক কঠিন সংগ্রাম। যা শিক্ষকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। একই পাঠ্যক্রম, একই ক্লাসঘণ্টা ও সমপরিমাণ দায়িত্ব পালন করলেও সরকারি, এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে বেতন ও সুযোগ-সুবিধার বিশাল ফারাক। নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার আগে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

বেতনবিহীন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘সংসারের ভরণপোষণ করাই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। নিজের জীবনের কথা নাই ধরলাম কিন্তু পরিবারে বাবা, মা, ভাইবোন এবং স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের।’

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার শবদলদীঘি বালিকা দাখিল মাদ্রাসার কৃষি বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক সাহিনুর আলম জানান, ‘১৩ বছর ধরে তিনি বিনা বেতনে চাকরি করে আসছেন। ১৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও তিন জন কর্মচারী প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো বেতন-ভাতার মুখ দেখেননি।’ চাকরিজীবনের শেষ পর্যন্ত বিনা বেতনে সেবা দিয়ে অবসরে গেছেন জয়পুরহাটের মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আবু তাহের। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে নিয়মিত ক্লাস নিয়ে দায়িত্ব পালন করলেও কখনোই মাসিক বেতন পাননি তিনি।

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ সংগ্রাম বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পতিত সরকারের রোষানল ও প্রতিহিংসার কারণে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বহু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। তাই আজ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীগণ সমাজে মর্যাদাহীন, অবহেলিত, নিগৃহীত, বঞ্চিত ও অসহায়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বয়স ২৫ বছর বা তার চেয়েও বেশি। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী বিনা বেতনে অবসরে গেছেন, কেউ কেউ বিনা বেতনে কাজ করে মারা গেছেন। তাদের পরিবার-পরিজন আজ পথে বসে গেছে। তাই দেশের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সচল সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তকরণের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে তা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার আগেই বাস্তবায়ন জরুরি।

এমপিওভুক্তকরণের এক দফা দাবি আদায়ে আয়োজিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্মসদস্য সচিব ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ সংগ্রাম বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মোসা. সামিয়া শিমু পান্না, বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষদের চেয়ারপারসন অধ্যক্ষ মো. জমির উদ্দিন চৌধুরী, মেম্বার সেক্রেটারি মামুন সিরাজুল কাদের ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান, বেতনবিহীন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. ফরিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক জেলহক জুয়েল প্রমুখ।

দেশের ৭৩ শতাংশের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নন-এমপিও:বেসরকারি খাতে বর্তমানে ৯২ হাজার ৩৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে মাসিক পে-অর্ডার (এমপিও) সুবিধাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ২৬ হাজার ১০৪টি। বাকি ৬৬ হাজার ২৮৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয়। অর্থাৎ বেসরকারি খাতের মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭৩ দশমিক ৬ শতাংশই এমপিও সুবিধার বাইরে। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, যার প্রভাব পড়ছে পাঠদানেও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়, অনার্স-মাস্টার্স কলেজ, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ, এনজিও পরিচালিত স্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইএইচটি-ম্যাটস পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য যুক্ত করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক বলেন, বেসরকারি শিক্ষার মান বাড়াতে হলে সরকারকে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ এবং সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিবন্ধীদের স্কুল এমপিওভুক্তিসহ পাঁচ দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান :এমপিওভুক্তিসহ পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। তারা বলেন, স্বীকৃতি ও এমপিও না হওয়ার ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন, যা প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের লং মার্চ : ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম জাতীয়করণের দাবিতে দীর্ঘ ১৪ দিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর অভিমুখে লং মার্চ করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। লং মার্চে অংশ নেন শত শত শিক্ষক। এ সময় তারা ‘ইবতেদায়ি শিক্ষক, হয়েছে কেন ভিক্ষুক?’, ‘চাকরি আছে বেতন নাই, এমন কোনো দেশ নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার দ্রুত প্রজ্ঞাপন না দিলে আমরা সারা দেশে ক্লাসপরীক্ষা বর্জন করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।’ সূত্র ইত্তেফাক

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host