গাজার দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, যা উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আনন্দের উল্লাস সৃষ্টি করেছে। বন্দি মুক্তি, সামরিক অভিযান স্থগিত এবং সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতির এই চুক্তি গাজায় আশার বাতাস বইয়ে দিয়েছে।
চুক্তির খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গাজার বাসিন্দারা রাস্তায় নেমেছেন। কেউ গান গাইছেন, কেউ বাঁশি বাজাচ্ছেন, কেউ নাচে মেতে উঠেছেন এবং বারবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলে আনন্দ প্রকাশ করছেন। ৫ সন্তানের মা ঘাদা জানিয়েছেন, “হ্যাঁ, আমি কাঁদছি; কিন্তু এটি আনন্দের অশ্রু। মনে হচ্ছে, নতুন করে আবার আমাদের জন্ম হলো।” তিনি জানান, ইসরায়েলি বোমার আঘাতে যে বাড়িতে তারা থাকতেন, সেটি ধ্বংস হওয়ার পর গত ১৫ মাস ধরে তাঁবুতে বসবাস করছেন।
চুক্তির প্রাথমিক বাস্তবায়ন আগামী ছয় সপ্তাহ ধরে চলবে। এই সময়ের মধ্যে হামাস তাদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে, ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবে, কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে এবং পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার করবে। ৩ অক্টোবর শুক্রবার হামাস চুক্তিতে সম্মতি জানায়, আর ৪ অক্টোবর ইসরায়েল বোমাবর্ষণ বন্ধ করে। এরপর ৬ অক্টোবর মিসরের শারম আল শেখ শহরে দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে বৈঠক চলার পর চুক্তিতে স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়।
কিন্তু চুক্তির আনন্দের মাঝেও আতঙ্কের ছাপ রয়ে গেছে। গাজার বিভিন্ন এলাকায় এখনও ইসরায়েলি বিমান হামলা চলছে। গাজার সিটির বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-জারু জানিয়েছেন, বুধবার তিনি আকাশে যুদ্ধবিমান উড়তে দেখেছেন এবং মঙ্গলবার সারাদিন বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তবুও মানুষ যুদ্ধবিরতির খবরকে আশার প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
খান ইউনিসের বাসিন্দা খালেদ শাআত বলেন, ‘এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দুই বছরের হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞের পর ফিলিস্তিনিদের জন্য এই মুহূর্ত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত।’ অন্য বাসিন্দা আবদুল মাজিদ আবদ রাব্বো জানিয়েছেন, পুরো গাজা উপত্যকা উল্লসিত এবং সমস্ত আরব দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই যুদ্ধবিরতি স্বাগত জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪১ জন। জাতিসংঘের এক স্বাধীন তদন্তে প্রথমবারের মতো বলা হয়, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। যদিও ইসরায়েল সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জিম্মি মুক্তির বিষয়েও চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিদের হস্তান্তর করবে। তবে নিহত জিম্মিদের মৃতদেহ উদ্ধারে আরও সময় লাগবে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, সম্ভবত সোমবার বন্দিরা মুক্ত হবেন।
চুক্তির ফলে গাজার ধ্বংসস্তূপের মাঝে মানুষ পুনরায় জীবনকে আলিঙ্গন করতে পারবে বলে আশা করছেন। তবে অনেকেই সতর্ক, কারণ অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে হামাস এখনও স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি।
সূত্র : সিএনএন ও রয়টার্স