পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রশাসনের কেন্দ্রে রয়েছেন একজন নারী। যিনি ইতোমধ্যে তার কর্মতৎপরতায় সততা,দক্ষতা ও রুচিশীলতার মাধ্যমে উপজেলার সকল স্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনি কেবল পদমর্যাদাশীল ব্যক্তির সাথে কথা বলেন এমন নয় বরং ভিক্ষুক থেকে শুরু করে নিম্নপেশার সকলেই তার চেম্বারে অবাধ প্রবেশের সুযোগ পান। সবার কথাই তিনি মনোযোগসহকারে শ্রবণ করেন। এজন্য সবার কাছেই তিনি প্রিয়। উনি ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা.নাজমুন নাহার।
উপজেলা প্রশাসনের রুটিন ওয়ার্ক ছাড়াও এই ইউএনও উপজেলার শিক্ষা,সংস্কৃতি,নৈতিকতাসহ অনেক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থেকে উপজেলার গুণগত মানের উন্নয়নে কাজ করছেন। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানবিক ও নৈতিক বুদ্ধিমত্তার ভান্ডার গড়ে তুলতে নানা কর্মসূচী তিনি গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয় ভিজিট ও ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হবার পাশাপাশি ভালো মানুষ হবার দীক্ষা দিচ্ছেন। তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। গত ২১ জুলাই উপজেলার শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে আসে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলায় তার দায়িত্ব পালনের সময় প্রায় দেড় বছর। উপজেলা পরিষদে একটি শহীদ মিনার,শিশু বিনোদনের পার্ক,মিনি লাইব্রেরী,পাশে তালিমুল কোরান মাদ্রাসা প্রভৃতি ছিল। কিন্তু শহীদ মিনারটি ছিল অবহেলিত,পার্কে শিশু বিনোদনের তেমন কিছু ছিলনা। পরিষদের মাঠ সংস্কারের অভাবে ক্রমেই খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে ওঠে। তালিমুল মাদ্রাসা ভেঙ্গে যাচ্ছিল,ক্যাম্পাসের বাউন্ডারি না থাকায় নিরাপত্তা হুমকীর মুখে পড়ে। দীর্ঘদিনেও পরিষদের প্রধান ফটক পর্যন্ত ছিলনা। অন্যান্য কিছু থাকলেও যেন মনে হতো কিছুই নেই ! তাই পরিষদের নিরাপত্তা ও স্যেন্দর্য বর্দ্ধনে তিনি গ্রহণ করেন প্রধান গেট নির্মাণসহ নানা প্রকল্প।
এগুলোর মধ্যে উপজেলা পরিষদ পার্কের মাঠ ভরাটকরণ ও শিশু বিনোদনে খেলার সরন্জাম স্থাপন,সুদর্শন গেট নির্মাণ ও অফিসার্স ক্লাবের মাঠ সংস্কার উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি তালিমুল কোরান মাদ্রাসার ভগ্নদশাগ্রস্থ ভবন সংস্কার করে দর্শনীয় করে তোলেন।
উপজেলার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করা উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণ হবে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়- এ প্রত্যাশা সবার কিন্তু এখানে সেই ভাবটা ছিল না। তবে সময়ের সাথে এর পরিবর্তন হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শ ও নির্দেশনায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়া শহীদ মিনারকে চমৎকারভাবে মেরামত করা হয়েছে। জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। বিগত ১৭ বছর এই শহীদ মিনারটি জরাজীর্ণ ও আগাছায় পরিপূর্ণ ছিল। সাপের ভয়ে কেউ সাধারণত ওদিকে যেতো না। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখানে দৃষ্টিনন্দন গেট নির্মাণসহ নানা স্থাপনায় সৌন্দর্যে পরিপূর্ণহ হয়ে উঠেছে।
এ ছাড়াও, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রশাসনের পার্কের মাঠটিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাচ্চাদের খেলার জন্য পার্কটিতে বিভিন্ন প্লে এক্সেসরিজ স্থাপন করা হয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায়। এই পার্কের মাঠে খেলা করে আশপাশের সকল বাচ্চা। উপজেলা সেবাব্রতী কিন্ডারগার্টেন এর শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী নয়না বলেন,” ইউএনও আন্টি দোলনা বানায়ে দিছেন! আমার এখানে খেলতে খুব ভালো লাগে।” দৃষ্টিনন্দন খেলনা এবং বিভিন্ন প্রাণীর আকর্ষণীয় ভাস্কর্য দিয়ে ঘেরা এই পার্কটি বিকেলে শিশুদের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে। শিশুদের সাথে অভিভাবকরাও নানা ভাস্কর্যসম্বলিত আসনে বসে বিনোদন উপভোগ করেন। তাছাড়া, উন্নয়ন ও সংস্কারের ধারাবাহিকতায় উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গনে অবস্থিত গাছগুলোকে গোল করে বাধাই করে বসার উপযোগী করা হয়েছে যাতে বিকেলে মাঠে খেলতে আসা মানুষ ক্লান্ত হয়ে বসে বিশ্রাম নিতে পারে।
এই উপজেলার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যাংকার সহ ক্রীড়ামোদি ব্যক্তিরা উপজেলায় অবস্থিত ‘অফিসার্স ক্লাবে’ ব্যাডমিন্টন খেলেন। এর মাঠের দশাও ছিল বেহাল। সেটিও সংস্কার করে দৃষ্টিন্দন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গনে যত্রতত্র প্রবেশ করা যেত। যার ফলে সৌন্দর্যহানি হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতো। এই বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণকে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনাটি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম। তিনি বলেন, ‘সীমানা প্রাচীর নির্মাণের টেন্ডার হয়ে গেছে। খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে’। আর শুরু থেকেই কোন প্রবেশ ফটক না থাকলেও একটি দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ ফটকের কাজ চলমান রয়েছে।
কেউ কেউ প্রকল্পগুলোকে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় বললেও তা নাকচ করে দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন”এটি মোটেও অপচয় নয়। সৌন্দর্য ও প্রশাসনিক সেবা পরস্পরসম্পর্কিত। ব্যাপারটি মনস্তাত্ত্বিক। পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত পরিবেশ কার্যকর সেবা নিশ্চিত করে। আর এভাবেই একদিন ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ হয়ে ঊঠবে তিলোত্তমা প্রাঙ্গন।
দৃশ্যমান এই উন্নয়ন কার্যক্রমের অর্থায়ন সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাজমুন নাহার বলেন, “প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে এই উপজেলার সকল মানুষের ভালো-মন্দ দেখ-ভালের দায়িত্ব যেমন রয়েছে তেমনি এই কার্যক্রম গুলো সমগ্র উপজেলাবাসীর উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নসহ সকল কর্মকান্ড স্বচ্ছতার সাথে পরিচালনার বাধ্যবাধকতা আমার রয়েছে। এগুলো ব্যতিক্রম নয় বরং যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয়েছে।”
ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণের এই দৃশ্যমান পরিবর্তন শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য ও মনোগ্রাহী করে তুলবে। তখন এটা্ও হবে একটি দৃষ্টান্ত । সেই সাথে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ তিলোত্তমা প্রাঙ্গণে রুপ নিবেই।।