1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ অপরাহ্ন

গৃহিণী থেকে সফল খামারি, মাসে আয় লাখ টাকা

ডিডিএন ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫
  • ১১ সময় দর্শন

‘দিনে তিন বেলার জায়গায় একবেলা খাইয়াও দিন কাটাইছি। আটজনের সংসারে সবার পাতে খাওন দিয়া থাকলে খাইছি। সেইসব দিনের কথা ভাবলেও কষ্ট লাগে’-ফরিদা বেগমের সেইসব কষ্টের দিনও এখন ফিকে হয়ে এসেছে। 

অভাবী সেই মানুষটি আজ সফল খামারি। শূন্য থেকে শুরু করে হয়েছেন লাখপতি। কঠোর পরিশ্রম ও নিরন্তর চেষ্টায় গড়ে  তুলেছেন ছোট্ট একটি গৃহপালিত পশুপাখির খামার। যে খামার ঘুরিয়েছে তার ভাগ্যের চাকা। খামার থেকে প্রতি মাসে মুনাফা করছেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা।

জেলার সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন দেলপাড়ার বাসিন্দা আজিজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৩৭)। মাত্র তেরো বছর বয়সে বিয়ে করে স্বামী আজিজ মিয়ার সাথে যশোর থেকে নারায়ণগঞ্জে পাড়ি জমান।  এরপর একে একে চার সন্তানের মা হয়েছেন। স্বামীর চায়ের দোকানের আয়ে শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ পরিবারের ভরণপোষণ ছিল কষ্টসাধ্য।

আয়ের চেষ্টা করেও সফলতার ছোঁয়া পাননি। তবুও দমে যাননি। অবশেষে গৃহপালিত পশু-পাখি পালন করে হয়ে উঠেছেন একজন আত্মনির্ভরশীল নারী।

নিজস্ব জমি নেই ফরিদা বেগমের। ফতুল্লার দেলপাড়ায় একটি ভাড়া বাড়ির এক অংশে তিনি পরিবার নিয়ে বাস করেন।  অন্য অংশে গড়ে তুলেছেন গৃহপালিত পশু-পাখির খামার। সেখানে বসেই নিজের জীবনের বাঁক ঘুরে যাওয়ার গল্প শোনালেন তিনি।

অভাবের তাড়নায় ভাগ্যের পরীক্ষা

বাসসের সাথে আলাপকালে ফরিদা বেগম বলেন, ‘ঘরে দুই টাকা বাড়তি আনার জন্য অনেক কাজ করছি।  কিন্তু কোন লাভ হয় নাই। পরে একদিন সিরাজগঞ্জের এক ভাই আমারে কইলো, আপনে গরু পালেন, পালতে পারলে লাভ আছে। ওনারে আমি চিনতামও না। অপরিচিত একটা মানুষরে কেমনে টাকা দেই! আমার জামাই মত দিতাছিল না।

আমার বড় মাইয়া কয়, আম্মু  দেও  টাকা,  মনে করো এটা আমাগো ভাগ্যের খেলা। হয় হারমু, নয় জিতমু। পরে ৪০ হাজার টাকা কিস্তিতে ঋণ নিয়া সিরাজগঞ্জের খোকন ভাইরে দেই। গরু নিয়া সেই দিন রাতেই আওনের কথা আছিল। দুইদিন পাড় হলেও সে আয়ে না। চায়ের দোকানের  টাকায় সংসার চলেনা। কিস্তি দিমু কেমনে? টেনশনে টেনশনে খালি কানছি। তিনদিন পর রাইতে  দুইটা বাছুর নিয়ে আইসে। বাছুর পাইয়া কি যে খুশি হইছিলাম! এক মাস বারো দিন পর বাছুর গুলা বিক্রি করে ৩২ হাজার টাকা লাভ হইছিল। এটা দেইখা মাইয়ার বাপেও কয়, ‘গরুতে লাভ ভালোই হয়। সারা বছর কামাইয়াও তো এতো টাকা একসাথে জমাইতে পারি না আমরা।

ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে ফরিদার

গরু বিক্রির লাভের টাকা ফরিদার চোখে জ্বালিয়ে দেয় আশার আলো। দেখেন খামার করার স্বপ্ন। তিনি বলেন, ৩২ হাজার টাকাসহ কিছু টাকা ঋণ নিয়া আমার জামাইরে পাঠাইলাম সিরাজগঞ্জ। তারে বললাম গরুর লগে আমার জন্য ২ টা ছাগলও আইনো। কিন্তু সে প্রথমে রাজি হয় নাই। পরে সেখান থেকে ৭৬ হাজার টাকা দিয়ে একটা বাছুরসহ দুধের গাভি আনে। আর ৯ হাজার টাকা দিয়ে ৪ টা ছোট ছাগলও আনে। এগুলো থেকে  বাচ্চা হয়। আবার আমাগো এলাকার একটা খামার থেকে ৫টা ছাগল কিনছিলাম ১৭ হাজার টাকা দিয়া। ছাগল একেবারে ৩ টা করেও বাচ্চা দেয়। এক বছরের মধ্যে ছোট বড় মিলাইয়া আমার ৮০ টা ছাগল হইছিল। ছাগল প্রতিটা সাইজ অনুযায়ী ১০ হাজার থেকে ১২  হাজার টাকায় বেঁচছি। বছরখানেক বাদে  আমারে এক দালালে জানাইলো, ভেড়া পালতে তেমন খরচ নাই, অসুখও কম হয়।  সেসময় গরু বেচছিলাম একটা। সেই টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় ভেড়া কিনছি। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে রূপগঞ্জের গাউসিয়া থেকে ১৪ টা ভেড়া আনি। এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকার ভেড়া বেঁচছি। এখন আমার খামারে ৪৫ টা ভেড়া আছে।

ফরিদা বলেন, ‘আমি কোন জায়গা ফালায় রাখি না। ময়মনসিংহের এক লোকরে বলছি, ভাইরে আমারে কয়টা দেশি মুরগি আইনা দিস। এখন আমার খামারে বাচ্চাসহ ৫০ টার মতো মুরগি আছে। চিনা হাঁস আছে ৬ টা। কয়েকদিন আগেই ৪৫ টা হাঁস বেঁচছি। এখন আবার ডিম দিয়া বসাইছি । শখ কইরা আমি কয়েকটা কবুতরও পালি। এগুলার জন্যই আজকে কয়টা টাকার মুখ দেখছি। আমার ছাগল, ভেড়া, গরুর দুধ কোথাও গিয়া তেমন বেচন লাগে না। সবাই আমার খামার চিনে।  খামার থিকাই সব বেচা হইয়া যায়।’

পশুপাখির সেবায় দিন-রাত

খামারে তিনটি পৃথক শেডে গরু, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি লালন পালন করেন ফরিদা। খামারের প্রথম শেডে রয়েছে ৫টি গাভিসহ ৪ টি বাছুর। দ্বিতীয় শেডে রাখা হয়েছে ৫০-৬০ টি ছাগল ও ভেড়া। অন্য পাশের এক শেডে দেশি মুরগি ও হাঁস রয়েছে অর্ধ শতাধিক। এই শেডেই একটি মাচা তৈরি করে রাখা হয়েছে।  ফরিদা বেগম জানান, প্রাণীদের দেখাশোনার জন্যে তিনি মাচার উপরে বিছানা পেতে রাতে সেখানেই ঘুমান।

শখ করে গরু ছাগলের নানা নাম দিয়েছেন ফরিদা।  সুন্দরী, লালবানু, কালন, রানি,  রাজা এমন অনেক নামে এসব প্রাণীদের  পরিচয় করিয়ে দেন তিনি
নিজের গৃহপালিত প্রাণীগুলো তার সন্তান সমতুল্য জানিয়ে এই খামারি বলেন, ২০১৯ সালে গরু পালন দিয়া শুরু করি। ৬ বছর ধইরা এগুলারে আমি পালি। এগুলা আমার সন্তানের চেয়ে কোন অংশে কম নাহ। অনেক কষ্ট করছি শুরুতে। আমার ছোট বাচ্চা নিয়া ঘাসও কাটছি। রাতে এগুলোর যেন কোনো সমস্যা না হয় এজন্য এনেই ঘুমাই। এই বাসায় ছয়টা ঘর আছে। থাকার জায়গার কোন অভাব নাই। কিন্তু রাতে গরু ছাগলের বাচ্চা হলে কিংবা অন্য সমস্যা হলে যেন আমি সাথে সাথে তাদের কাছে যাইতে পারি এজন্যই এই ব্যবস্থা।

খামারিদের কাছে প্রেরণার উৎস ফরিদা

কারো কথায় পিছু না হটে, হাল না  ছেড়ে খামারিদের কাজ শুরু করে কেবল এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন  ফরিদা।

তিনি  বলেন,  ছয় শতাংশের অর্ধেকটা বাড়ি, বাকিটা খামার। এখানে আমি ১০ হাজার টাকা ভাড়া দেই। ভাড়াসহ প্রতি মাসে খামারে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়া আমার এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ থাকে। দুইটা সিএনজি কিনছি। আমার কোন জমি নাই,  কিচ্ছু ছিল না।  আমি শূন্য হাতে শুরু করছিলাম। আমি যদি পারি, অন্যরাও পারব।  কারো খারাপ  কথায় কান দেওয়া যাইবো না, কঠোর পরিশ্রম করা লাগব খালি।

আমার দুইটা বাছুর থেকে যখন আমি লাভ করেছিলাম, তখন থেকেই আমার ইচ্ছে জাগছিল আমি একটা বড় ফার্ম দিবো। আমার ইচ্ছা,  আমি ১০ কাঠা জায়গা কিনে বিশাল বড় ফার্ম দিবো।  জমি নাই দেইখা, ফার্মটা বড় করতে পারি না। ব্যাংক থেকে বড় ঋণ পাইতেও  জায়গা দেখান লাগে।

জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মান্নান মিয়া  বাসসকে বলেন, আমরা সকল শ্রেণির খামারিদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহায়তার ব্যবস্থা করে থাকি । আর নারী খামারিদের

সর্বোচ্চ সহায়তা করা হয়। কিন্তু সকলে সফল হতে পারেনা। খামারি ফরিদা বেগম  অন্যান্য খামারিদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সূত্র: বাসস

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host