1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পাবনায় ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বেইজিং ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার গাজা ও ইয়েমেনে হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান আলী খামেনির রায়পুরায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে নিহত ২ হত্যা-লুটপাটে জড়িত নয়, এমন নেতৃত্বে আ’লীগের রাজনীতিতে বাধা নেই: রিজভী ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ‍’ নামে নতুন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা চলছে: হাসনাত আ.লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না: জামায়াত আমির ঈদে সংবাদকর্মীদের ছুটি কমপক্ষে ৫ দিন করার দাবি এসআরএফের যেসব গণমাধ্যম সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন দেবে না তাদের আর দরকার নেই : শফিকুল আলম পাবনায় বাসচাপায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত

মাখাভাত ফেলে বিজয় মিছিলে গিয়ে শহীদ হন তাহমিদ

ডিডিএন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ২২ সময় দর্শন

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে মাখাভাত ফেলে বিজয় মিছিলে যোগ দিতে যান মো. তাহমিদ আবদুল্লাহ।

সেদিন দুপুরে বাসায় তিনি লালশাক দিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় বন্ধুর ফোনে জানতে পারেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তখন তাহমিদ লালশাক দিয়ে মাখাভাত খানিকটা খেয়ে আন্দোলনে চলে যান। যাওয়ার সময় মাকে বলে যান, ‘দ্রুত বিজয় মিছিলে যেতে হবে। বাকি মাখাভাত তুমি রেখে দাও, এসে খাবো।’ সেদিন দুপুরের খাবারে ভাতের সঙ্গে আলুভর্তা, লালশাক ও মুড়িঘণ্ট ছিল।

মা বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করায় তাহমিদ বলেছিলেন, ‘এই তো এক্ষুনি চলে আসব।’ ঘণ্টাখানেক পর মা তানজিল খবর পান, ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এরপর গুরুতর আহত তাহমিদকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেছেন সহযোদ্ধারা।

তাহমিদের মা বলেন, ‘আমার ছেলেটাকে যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে ও সুস্থ হয়ে যেত। গুলিবিদ্ধ তাহমিদ নিয়ে তিনটি হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এত রক্তক্ষরণ না হলে হয়তো আমার ছেলেটা বেঁচে থাকত।’

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসায় রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ মো. তাহমিদ আবদুল্লাহর মা তানজিল এমন কথা জানান।

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গুলিবিদ্ধ হলেও ১০ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাহমিদকে দাফন করা হয়।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে মিছিলে ছিলেন তাহমিদ। মিরপুর-২ এ পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এরপর দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ আগস্ট তার মৃত্যু হয়।

আন্দোলন চলাকালে মাকে আন্দোলনে যেতে বলতেন তাহমিদ। কিন্তু মা যেতে চাননি দেখে রাগ করে বলেছিলেন, ‘মা, তুমি কখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো না, আমাকেও করতে দিতে চাও না।’

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তাহমিদ। বিজয় মিছিলে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি তার বুকে লাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ আগস্ট মারা যান তিনি। চার বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর তাহমিদের পড়াশোনা শেষ করার অপেক্ষায় ছিলেন মা।

আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট ছররা গুলি পায়ে ঢুকে যাওয়ায় আহত হয়েছিলেন তাহমিদ। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যথায় কুঁকড়ে গেলে তার আঘাত পাওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন মা। পরে জানতে পারেন, পায়ে ছররা গুলি ঢুকেছিল, যা স্থানীয় ক্লিনিকে বের করা হয়েছিল।

সেনপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, দুটি বহুতল ভবনের মাঝখানে তাহমিদের একতলা বাড়ি। পৈতৃক বাড়িটি অনেক পুরোনো। তাহমিদের বাবা একমাত্র সন্তান ছিলেন। বাসায় গিয়ে দেখা যায়, একটি সরু জায়গা, যার দুই পাশে সারিবদ্ধ ঘর। দুটি ঘরে তাহমিদের মা সন্তানদের নিয়ে থাকেন, আর পাঁচটি ঘর তিনি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। পরিবারটি চলে বাসা ভাড়ার টাকা দিয়ে।

পরিবারে এখন মা আর দুই বোন। তাহমিদের ‘ব্রাউনি বেবি’ ও ‘টাইগার’ নামে দুটি বিড়াল রয়েছে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তাহমিদ ছিল সবার বড়। ছোট দুই বোন ফাতেমা তাসনিম (১৫) ও খাদিজা নুসরাত (৯) মাদ্রাসায় পড়ে। তাহমিদের বাবা মো. আবুল হোসেন ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের স্কোরার। তিনি ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

শহীদ তাহমিদের মা তানজিল বলেন, ‘বাবার সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল তাহমিদের। বাবার অকালমৃত্যুর পর মা ও ছোট দুই বোনের বিষয়ে তাহমিদের দায়িত্ববোধ বেড়ে গিয়েছিল। পড়াশোনা শেষ করে সংসারের হাল ধরার ইচ্ছা ছিল তার।’

তাহমিদ মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ থেকে পাস করার পর ২০২২ সালে বিইউবিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। তার তৃতীয় সেমিস্টার শেষ হয়েছিল।

মা আরও বলেন, ‘শুরু থেকেই বিইউবিটির সহপাঠীদের সঙ্গে প্রতিদিন আন্দোলনে যোগ দিত তাহমিদ। আমি ছেলের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পেতাম। একদিন ছেলে বের হওয়ার সময় আমাকে আন্দোলনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।

বলেছিল, ‘মা, তুমিও আন্দোলনে চলো।’  উত্তরে আমি বলেছিলাম, ‘তোমার বাবা নেই। যদি আমরা মরে যাই! তোমার বোনদের কে দেখবে?’ তখন তাহমিদ বলেছিল, ‘ওদের আল্লাহ দেখবেন, তুমি চলো।’ মা যেতে চাননি দেখে রাগ হয়ে বলেছিল, ‘মা, তুমি কখনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো না, আমাকেও করতে দিতে চাও না।’

বিজয় মিছিল করতে গিয়ে ৫ আগস্ট মিরপুর-২-এ তাহমিদ গোলাগুলির মাঝে পড়ে যান। তখন একটি খুঁটির পাশে বসে পড়েন। অনেক সময় হয়ে যাওয়ায় গুলি থেমে গেছে ভেবে তিনি উঠে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হন। বুকের বাম ও ডান পাশে গুলি লাগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তার ফুসফুসে তিনটি ছিদ্র হয়েছিল। দুটি গুলির একটি ফুসফুস ভেদ করে বেরিয়ে যায়, অপরটি আটকে ছিল।

তাহমিদের প্রতিবেশী হাজেরা চৌধুরী বলেন, ‘ছেলেটা খুব ভালো ছিল। সারাক্ষণ ওর মুখে হাসি লেগেই থাকত। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে ওর বাবার মতো আগে বড় করে হাসত, তারপর কথা বলত।’

তাহমিদ আবদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি।

সূত্র: বাসস

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host