অনলাইন ডেস্কঃ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতে বাংলাদেশকে আন্ডারডগ বলতে রাজি ছিল না আইসিসি। কিন্তু স্কটল্যান্ডের সঙ্গে হারের পর বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়ার সম্ভবনা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল ক্রিকেট ভক্তদের মনে। ওমানের সঙ্গে তাই দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। এমন কঠিন সমীকরণে দাড়িয়ে নার্ভ ধরে রাখতে পারেনি ক্রিকেটাররা। শুরুটা হয়েছিল ম্যাড়ম্যাড়ে। মাঝের দিকে এক পাশ আগলে দারুণ প্রতিরোধ গড়েন নাঈম শেখ ও সাকিব আল হাসান। এতেই স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়াকু পুঁজি গড়ে ২৬ রানের ব্যবধানে হারিয়ে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
আজ মঙ্গলবার রাত ৮টায় ওমানের আল-আমেরাত স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাট করতে এসে নির্ধারিত ওভারে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান তোলে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ৬৪ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন নাঈম। বল হাতে ওমানের হয়ে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন ফাইয়াজ বাট ও বিলাল খান। জবাবে নির্ধারিত ওভারের ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান তোলে ওমান। বল হাতে দুর্দান্ত চার ওভার করেন মেহেদী ও সাইফউদ্দিন। তাদের সঙ্গে যোগ হন সাকিব ও মুস্তাফিজ।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি ওমানে। মাত্র ১১ রানে ওপেনার আকিব ইলিয়াসকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তিনে এসে ঝড়ো শুরু করেন কাশাপ প্রজাপতি। বোলিংয়ে কিছু বেগ হারায় বাংলাদেশ। ফিল্ডিংয়েও বেশ কয়েকটি ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেনি টাইগাররা। এমন হতশ্রী ফিল্ডিং বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৪৭ রান তোলে ওমান।
পঞ্চম ওভারে প্রথম বলে কাশাপকে ফেরানোর সুযোগ পেয়েও সহজ ক্যাচ ফেলে দেন রিয়াদ। কিন্তু একই ওভারের চতুর্থ বলে থিতু হতে বসা এই ব্যাটসম্যানকে ২১ রানে ফেরান তিনি। তৃতীয় উইকেটের জুটিতে ওপেনার যতিন্দর সিংয়ের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়েন অধিনায়ক জিশান মাকসুদ। ৩৪ রানের এই জুটি ভাঙেন শেখ মেহেদী। ১৬ বলে ১২ করে ডিপ স্কয়ার লেগে মুস্তাফিজের দুর্দান্ত তালুবন্দিতে ফেরেন তিনি।
ওপেনিংয়ে এসে দীর্ঘ সময় থিতু হয়ে বসে বাংলাদেশের চিন্তা বাড়ায় যতিন্দর সিং। এই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের কিছুটা আশা জাগিয়ে দেন সাকিব। ৩৩ বলে ৪০ রান করে স্কয়ার লেগে থাকা লিটনের ক্যাচ হন তিনি। দলীয় ১০১ রানের মাথায় নতুন ব্যাটসম্যান স্বন্দ্বীপ গোউদকে সাজঘরে ফেরান সাইফউদ্দিন। ৮ বলে চার রান করে কাভার অঞ্চলে মুশফিকের তালুবন্দি হন তিনি।
১৭তম ওভারে এসেই প্রথম বলে আয়ান খানকে দ্বিতীয় শিকার বানান সাকিব। ৯ রান করা এই ব্যাটসম্যানের ক্যাচ লংঅফে নেন রিয়াদ। সাকিবের পরের বলে একই জায়গা পরের বলে মোহাম্মদ নাসিমকেও নেন তিনি। ১৮তম ওভারে দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ম্যাচ সহজ করে দেন মুস্তাফিজ। নির্ধারিত ওভারের ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ করে তারা।
এর আগে, শুরুতে ব্যাট করতে আসেন দুই টাইগার ওপেনার নাঈম শেখ ও লিটন দাস। কিন্তু শুরুটা আগের দিনের মতো হলো। তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ডিপ মিডউইকেটে জীবন পাওয়ার পরের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন লিটন। জোড়ালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় আপিল করে লিটনকে ফেরায় ওমান। মাত্র ৬ রান করে বিলাল খানের শিকার হন তিনি।
তিনে সাকিব আল হাসানের জায়গা এসে শূন্য রানে ফেরেন শেখ মেহেদী হাসান। নিজের বলে নিজেই দুর্দান্ত ক্যাচে এই ব্যাটসম্যানকে ফেরান ফাইয়াজ বাট। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে ওপেনার নাঈম শেখের সঙ্গে প্রতিরোধী জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান। শুরুতে চাপে পড়ার পর দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলেন এই যুগল।
দলীয় ১০১ রানের মাথায় নিজের ভুলে নিজেই রান আউটের শিকার হন সাকিব। তাতেই নাঈমের সঙ্গে তার ৮০ রানের লড়াকু জুটি ভাঙে। দলের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার পর ফাইয়াজ বাট বলে সিঙ্গেলের ডাক দেন নাঈম। কিছুটা ধীর গতিতে দৌড়তে গিয়ে আকিব ইলিয়াসের সরাসরি থ্রোতে আউট হন তিনি। ২৯ বলে ছয় বাউন্ডারিতে ৪২ করেন তিনি। পাঁচে এসে সুবিধা করতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান। তিন রান করে বাউন্ডারিতে স্বন্দ্বীপ গোউদের তালুবন্দি হন তিনি।
পঞ্চম উইকেটের জুটিতে সুবিধা করতে পারেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব। উইকেটে টিকতে না পেরে কলিমুল্লাহর বলে এক্সট্রা কভার অঞ্চলে যতিন্দর সিংয়ের তালুবন্দি হন তিনি। একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। একই ওভারে ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক ও বিশ্বকাপের প্রথম ফিফটি করা নাঈমকে ৫০ বলে ৬৪ করে ফেরেন এই পেসার।
পজিশনে রদবদল এনে শেষের দিকে ব্যাটিংয়ে আসেন মুশফিক। একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আশা জাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯তম ওভারের ফাইয়াজ বাটের প্রথম বলে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষকের তালুবন্দি হন তিনি। পরের বলে ফেরেন সাইফউদ্দিনও। সাতে আসা মাহমুদউল্লাহর ১০ বলে ১৭ রানে ভর করে ১৫৩ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ।