ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা রাজশাহী মহানগরী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। সোমবার (২৪ মে) চাঁপাইনবাবগঞ্জে নতুন ৮২ জনের এবং রাজশাহীতে ৫৪ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ হয়েছে। উভয় জেলার আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগ চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজশাহী মহানগরীতে অবস্থিত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীতে অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী প্রায় অর্ধেক মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থায়ী অধিবাসী হওয়ায় রাজশাহী মহানগরীও করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজশাহী মহানগরীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো কঠোর লকডাউনের দাবি উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও রাজশাহীর সিভিল সার্জন সাংবাদিকদের কাছে রাজশাহীতে কঠোর লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ মে) রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫৪ করোনা রোগীর মধ্যে ৮৬ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং ৪৮ জন রাজশাহীর। এদের মধ্যে ১৪ জন আইসিইউতে রয়েছেন। যাদের বেশীরভাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের। সেখানকার রোগীদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।
তিনি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজন করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুইজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, একজন রাজশাহীর ও একজন পাবনার। এ নিয়ে গত তিনদিনে রামেক হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও করোনার উপসর্গে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ১ মার্চ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭১ করোনা আক্রান্ত রোগী ও ১১২ জন করোনার উপসর্গে মারা গেছেন।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, করোনার প্রথম ধাপে এই হাসপাতালে সর্বোচ্চ করোনার রোগী ছিলেন ৯৬ জন। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৬ জনে। ঈদের আগে রোগী কমে হয়েছিল ৭১ জন। কিন্তু ঈদের পর থেকে করোনা রোগী বাড়ছেই। যা একদিনে ১৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। ঈদের পরে আগত রোগীদের বেশির ভাগই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা।
তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ৫৫ ভাগ। তবে কম নয় রাজশাহীতেও। বর্তমানে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৪৫ ভাগ। করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসায় হাসপাতালে আরও একটি ওয়ার্ড বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আরও একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাতদিনব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। লকডাউনের জন্য সাতদিন আগেই আমরা সুপারিশ করেছিলাম। যা কার্যকর করতে বেশি বিলম্ব হয়ে গেছে। রাজশাহীতেও লকডাউন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে শামীম ইয়াজদানী বলেন, এখানে বর্তমানে লকডাউন দেওয়া না গেলেও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমানে যে হারে রামেক হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছে, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে রোগীর চিকিৎসা আমাদের ক্যাপাসিটির বাইরে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে সদর হাসপাতাল চালুর জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। যেহেতু সেখানে অক্সিজেন লাইন নেই সেক্ষেত্রে সেখানে সাধারণ রোগীদের রাখার ব্যবস্থা করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর রোগীদের চেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীদের অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভারতীয় ধরণ আছে কি না তা পরীক্ষা করতে ৪৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরএ পাঠানো হয়েছে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই নমুনার ফলাফল পাওয়া যায়নি। তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেলে এ বিষয়ে পরিবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার বলেন, রাজশাহীর সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো মানুষ রাজশাহীতে আসবে না। রাজশাহীর কেউ চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেতে পারবে না। এছাড়াও করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রতিটি উপজেলাতে মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। এরপরও যদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে তখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।