করোনা তখন সদ্য থাবা বসিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বন্ধ শুটিং। একটি চ্যানেলের হয়ে পারিবারিক শো করতে সবে শুরু করেছেন। শো নিয়ে আছে লম্বা প্ল্যানিং, সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। আর সকলের মতোই স্তম্ভিত অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকার। ছেলে সহজ আর তিনি গৃহবন্দি। বাড়ির সব কাজ সামলাতে হচ্ছে। যেতে পারছেন না বেহালায় বাবা-মায়ের কাছে। তাঁদের জন্যও চিন্তা।
তথাগতর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা অনেক জেনুইন, দাবি প্রিয়াঙ্কার। নিজস্ব চিত্র।
টলিপাড়ার শুট শুরু হলেও এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না তিনি। আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বললেন প্রিয়াঙ্কা, “আমার কোনও তাড়া নেই। কিছু কাজ তো হয়ে আছে। দেখা যাক। এখন তো সিরিজের কাজ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। আর আমি খুব ভাগ্যবান যে সব সময় চরিত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি আমার অভিনয়কে গুরুত্ব দিয়েছে।” অজান্তেই যেন স্বজনপোষণের প্রসঙ্গ নিয়ে চলে এলেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি মনে করেন লড়াই তাঁকে সবসময় চালিয়ে যেতে হবে। মানুষের লড়াই থামলে তার ক্রিয়েটিভিটি ফুরিয়ে যায়।
১২ বছর বয়স থেকে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে। হাতেখড়ি ধারাবাহিকে। ধারাবাহিক দেখে অডিশন দিয়ে ডাক পান ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এ। রবি ওঝা, যিশু দশগুপ্ত, কুণাল মিত্র-র সহযোগিতা তিনি কোনও দিন ভুলবেন না। তা হলে ইন্ডাস্ট্রির স্বজনপোষণ নিয়ে অভিনেতারা যে এত সোচ্চার সে বিষয়ে কী বলছেন প্রিয়াঙ্কা? “দেখুন, আমি কখনও বলতে পারি না আমি স্বজনপোষণের শিকার হয়েছি। আমার প্রথম ছবিতে আমি যেমন নিউকামার ছিলাম, পরিচালক হিসেবে রাজদাও নতুন আর রাহুলও নতুন। স্বজনপোষণ থাকলে তো আমরা কেউ কাজটাই পেতাম না। আসলে এই বিষয়টা নিজের উপরেও নির্ভর করে।” বুঝিয়ে দিলেন প্রিয়াঙ্কা।
মাঝে রাহুলের সঙ্গে বিয়ে, ছেলে হওয়ার জন্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরেও গিয়েছিলেন তিনি। তবুও ফিরতে অসুবিধে হয়নি? “না। আমি তো ফিরে ‘রাজকাহিনি’-র মতো ছবি করলাম। ‘অ্যাবি সেন’ করলাম। এখন আবার দেবের প্রোডাকশনে কাজ করছি, দেবও নতুন প্রযোজক! কাজের দাম এই ইন্ডাস্ট্রি দেয়, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তাই বলে।”
ছেলে সহজের সঙ্গে মজার মুহূর্তে প্রিয়াঙ্কা। নিজস্ব চিত্র।
প্রিয়াঙ্কা বলতে চান, তিনি নিজেই সংসার করবেন বলে ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে গিয়েছিলেন। তাঁকে নতুন করে আর কে বাদ দেবে? তবে তিনি ফিরেছেন স্বমহিমায়। এখনকার প্রিয়াঙ্কার এক জন ম্যানেজার আছেন… এ প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি হেসে বলেন, “বলতে পারেন প্রয়োজন, এটা প্রফেশনালিজমের অংশ। সুবিধেগুলো আগে বলি। ধরুন, আপনি আমাকে ফোনে পাচ্ছেন না। আপনার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল বলে, অনায়াসেই বলতে পারি, ‘আজকে এগজস্টেড লাগছে, প্লিজ কালকে ফোন করি।’ এটা আমি সবাইকে বলতে পারব না। কারও কারও খারাপ লেগে যেতে পারে। কেউ বলবে অহঙ্কারী বা অ্যাটিটিউড প্রবলেম। সেখানে এক জন মিডলম্যান থাকলে সুবিধা হয় কমিউনিকেশনের। ডিরেক্ট প্রেশারটা আমার উপর পড়ে না,একসঙ্গে অনেক কাজ করা যায়।’’ ফেরার পর অনেক কাজই করেছেন প্রিয়াঙ্কা। অঞ্জন দত্তের মতো পরিচালকের সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দুটো ছবি, এমনকি অরিন্দম শীলের একের বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। প্রিয়াঙ্কা মনে করেন, “সৃজিতদার সঙ্গে আমার সব থেকে প্রশংসিত যে কাজটা, সেটা ‘হেমলক সোসাইটি’-র ওই একটা সিন। ওটা আমার লাইফ চেঞ্জ করে দিয়েছে, এমন একটা কাজ।”
আপনি বড় প্রযোজক, বড় ঘর আর বড় পরিচালকের লবির লোক, এ রকম শুনতে হয়নি? খানিক ভেবে প্রিয়াঙ্কার উত্তর: “কাজ করতে করতে কিন্তু একটা কমফোর্ট জোন হয়ে যায়। পরিচালক ভাবতেই পারেন তাঁর পরের ছবির অমুক চরিত্র আমিই করতে পারব। এটা লবিবাজি কেন ভাবব বলুন তো? শুধু কি অভিনেতা, টেকনিশিয়ানরাও তো বলেন, আমি অমুক লাইটের টিম নিয়েই কাজ করব, পরিচালক তাঁর পছন্দের ডিওপি-কেই চাইবেন!” বিস্ময় প্রিয়াঙ্কার গলায়।
সম্প্রতি ইন্ডাস্ট্রিতে শোনা গিয়েছে প্রিয়াঙ্কা তাঁর ব্যক্তিগত কমফোর্ট জোনে নাকি রদবদল ঘটিয়েছেন! চিত্রগ্রাহক তথাগত ঘোষের সঙ্গে নাকি তাঁর ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছে? বেশ কিছু সময় নিয়ে প্রিয়াঙ্কা হেসে গেলেন টেলিফোনে, তার পর পাল্টা প্রশ্ন, “ব্রেক আপ হওয়ার জন্য তো আগে কিছু ঘটতে হবে। আমরা তো বেস্ট ফ্রেন্ড! এর মধ্যেই তো আমরা ফটোশুট করলাম! ওর সঙ্গে কাজ আর বন্ধুত্ব চলতে থাকবে। ব্রেক আপের কোনও প্রশ্ন নেই। ওকে আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করি। আরও কাজ করতে চাই আমি ওর সঙ্গে। অনেক জেনুইন এই সম্পর্কটা। তাই বেস্ট ফ্রেন্ড বলাটাই ঠিক।”
লকডাউনে আরও বেশি ওয়ার্কআউট আর ডায়েট করে নিজেকে টোনড করেছেন প্রিয়াঙ্কা। “আমি কাজের জন্য নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখতে চাই। এখন কোভিডের সময় তাই ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাচ্ছি”, বললেন প্রিয়াঙ্কা। কথা বলতে বলতেই সহজের ঘরে চলে গেলেন প্রিয়াঙ্কা। লকডাউনের জন্য অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদের মামলার আজও সমাধান হয়নি। সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছেন প্রিয়াঙ্কা! জীবনে অবসাদ, দুশ্চিন্তা, করোনা যা-ই আসুক না কেন, এ পৃথিবীকে অনেক কিছু দিয়ে যেতে চান তিনি। আনন্দ বাজার