সুন্দর সমাজ গঠন এবং মানুষের জীবনের মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলে দাবি আদায়ের অন্যতম ভূমিকা রাখে রাজনীতি। ।শ্রেণী বৈষম্য,দুর্নীতি ,অরাজকতা পেশী শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেন রাজনীতিবিদেরা । রাজনীতিকে তাই জনসেবা ও বলা হয়। দার্শনিকদের মতে “একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা ও সম্পদ গুলো একটি জাতির মধ্যে সুষম বন্টন করার কৌশল হলো রাজনীতি।” ক্ষমতা ও সম্পদ যেখানে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে চলে যায় তখন সচেতন নাগরিকরা শোষিত মানুষদের অধিকার নিয়ে এগিয়ে আসে।সর্বোপরি রাজনীতির মুল উদ্দেশ্য সৎ ও সুন্দর কর্ম নিয়ে জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করা।একজন রাজনীতিবিদ হাজার জেল জুলুম সহ্য করে জনগণের পাশে থাকেন ।নিঃস্বার্থ ভাবে জনগণের পাশে থাকেন।
কিন্তু জনগণের আস্থা অর্জন করা তত সহজ বিষয় নয়।ভদ্রতা নম্রতা মার্জিত ব্যবহার সততা নিয়ে মানুষের মন জয় করে নিতে হয়।দেশের প্রতি ভালবাসা থাকতে হয়।দেশের ইতিহাস কৃষ্টি সংস্কৃতি ঐতিহ্যের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হতে হয়।তা না হলে দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রকর্মী হওয়া সম্ভব নয়।আর এই ভাবধারার অভাবের কারণে আজ স্বার্থপরতার রাজনীতি রাজনীতিকে কলুষিত করে ফেলেছে ।পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু কে স্বপরিবারে হত্যার পর রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে থাকে না।সেনা শাসকদের নিজেদের স্বার্থে ছলেবলে কৌশলে কিছুু সুবিধাভোগী নেতাদের নিজেদের পক্ষে নিয়ে যায়।অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রাতারাতি দলবল করে অনেক নেতা সামরিক শাসকের সাথে হাত মিলায়।নিজেকে বিক্রি করে ফেলে। আদর্শ পদদলিত করে মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
একাত্তরে বাংলাদেশের সুর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে মেধা শুন্য করতে চেয়েছিল পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী।তারপরও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুর্নগঠন করতে স্বচেষ্ট হন জাতির পিতা মুজিব ।বঙ্গবন্ধু মুজিব বুঝতে পেরেছিল স্বাধীনতা কোন দিন ফলপ্রসূ হবে না যদি মানুষের মাঝে সাম্যতা না থাকে। যদি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না হয়।তাই রাষ্ট্রনায়ক মুজিব উপনিবেশীক ব্যবস্থার পরিবর্তন এনে শোষিতের গনতন্ত্রের কথা বলেন । কিন্তু বুর্জোয়া বিশ্ব বঙ্গবন্ধুর চিন্তা কে বরদাস্ত করতে পারে নাই ।তাই সাম্রাজ্যবাদ ও পরাজিত শক্তির দেশীয় এজেন্টগণ বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়িত করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।
সাথে বাঙালির চেতনার ধারক সংবিধানের চার মুলনীতির উপর ছুরিকাঘাত করে। তছনছ করে ফেলে জাতিয় ঐক্যের সাম্যের সপ্নকে।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী দের রাজনীতির সুযোগ ফিরে দেয়া হয়।নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে সুবিধাভোগী নেতাদের দলে ভিড়ানো হয়।কলংকিত করে ফেলা হয় জাতীয় রাজনৈতিক চরিত্র ।
একদিকে জাতির বিবেক বুদ্ধিজীবী হত্যা অন্যদিকে পঁচাত্তরের পর রাজনীতিবিদদের চরিত্র হরণ, দেশকে অস্তিশীল করে ফেলে ।অপ রাজনীতি তারুণ্য কে বিভ্রান্ত
করে ,জংগীবাদ দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী বানায়।সুদীর্ঘ একুশ বছর ইতিহাস বিকৃতির মহাউৎসবে নিষ্পাপ তারুণ্য ইতিহাস ঐতিহ্য চর্চা থেকে বঞ্চিত হয় ।ফলে প্রতিহিংসাপ্রায়ন অবিস্বাসের রাজনীতির জন্ম হয়। লোভ ছড়িয়ে নতুন প্রজন্মকে ন্যায়নিষ্টতার পথ থেকে অনেক দুরে সরে ফেলা হয় ।পঁচাত্তরের পরের স্বৈরাচারী স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট নিজেই বলেছিলেন তিনি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি করা জটিল করে দিবেন।সত্যি তাই হয়েছে।অশুদ্ধ রাজনীতি প্রতিহিংসার নোংরা রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতি মানুষের আস্থা ভালবাসা কমে যায়।যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত ।তাই চাই শালীনতাপুর্ণ সুস্থ রাজনীতি।নাহলে দেশের প্রগতির প্রতি পদক্ষেপে প্রতিহিংসার রাজনীতি অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে ।
কিন্তু সমাজের নষ্ট রাজনীতির যে ধারা অনেক দিন থেকে চলে আসছে তা একদিনে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।দরকার সামাজিক আন্দোলন,বুদ্ধিবৃত্তীক আন্দোলন আর ইতিহাস ঐতিহ্য নির্ভর শুদ রাজনীতির চর্চা।যার জন্য আজ এগিয়ে আসতে হবে অগ্রজদের।আজ মুক্ত মিডিয়া ,স্বাধীন খবরের কাগজ ,রাজনীতির উপর অনেক ভাল ভাল বই।সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর উপর যত বই প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের অন্য কোন নেতাকে নিয়ে তত বই প্রকাশিত হয় নাই ।আবার ইতিহাস তার আপন গতিতে চলে।কেউ চাইলে ইচ্ছেমত বিকৃত করতে পারে না।পঁচাত্তরের পর যে তথ্য উপাথ্য লুকিয়ে ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়ে ছিল তাহা আজ কিছুই গোপন নাই ।জাতির কাছে সব পরিস্কার ।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছর বেশি করে বঙ্গবন্ধু চর্চা করা খুবই জরুরি।কারণ সত্যি বিচিত্র আমাদের দেশের রাজনীতি ।বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করি অথচ বঙ্গবন্ধু চর্চা করি না।বঙ্গবন্ধু শুধু একজন রাষ্ট্রনায়ক নয়।পৃথিবীর হাতে গুনা কয়েক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিজেদের দেশের উপযোগী কর্মসূচি প্রণয়ন করেন।বঙ্গবন্ধু তার মধ্যে অন্যতম ।তাই প্রত্যেক মুজিব সৈনিকদের বঙ্গবন্ধু দেখানো পথ অনুশীলন এবং অনুধাবন করা আবশ্যক।কারণ বঙ্গবন্ধুর ছবি সাথে নিয়ে ছবি তুললে বঙ্গবন্ধু চর্চা হয় না।
আজ স্বাধীনতার পরাজিত হায়নার দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন জায়গায় তারা ঘাপটি মেরে বসে আছে ।সময় ও সুযোগের অপেক্কায়। স্বাধীনতা ও মুক্তি যুদ্ধের চেতনা হুমকির সম্মুখীন ।এই প্রতিক্রিয়াশীল সম্প্রদায় কে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে হলে রাজনীতির জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মুজিব আদর্শের অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধতা ছাড়া কোন বিকল্প নাই।
আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটানা বার বছরের উপর ক্ষমতায় পার করল।দেশের অনেক উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান।কর্মী সমর্থকদের ভরা জোয়ার।কিন্তু কথা হল নেতা কর্মীদের মতাদর্শগত উন্নতি হয়েছে কিনা।কিন্তু সন্তোষজনক ভাবে কর্মীদের মেধায় উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না।কারণ সব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় হতাশা ,হা হুতাশ ।দুষারোপ।তার একমাত্র কারণ আদর্শীক রাজনীতির চর্চার অভাব ।রাজনৈতিক অনুশীলনের ঘাটতি ।বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ” নেতার মৃত্যু হতে পারে কিন্তু আদর্শ বজায় থাকলে সংগঠনের মৃত্যু হয় না”
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ও পুরনো দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ।কিন্তু দলের প্রতিটি ইউনিটে সংগঠনের কার্যালয় দেখা যায় না।প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নজরে পড়ে না।প্রতি ইউনিট বিশেষ করে জেলা উপজেলা পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বাধ্যতামূলক কার্যালয় থাকা অত্যাবশ্যক ।একটি বড় দলের নেতা কর্মীদের ভুল বুঝাবুঝি থাকা স্বাভাবিক।অফিস থাকলে অফিসে বসে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে সবাই মনে করে ।নেতা কর্মীদের ব্যক্তিগত কাজের অবসরে অফিসে বসে দৈনিক পত্রিকা পড়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক খবরাখবর রাখা যায় ।সর্বোপরি অফিস ভিত্তিক যোগাযোগ নেতা কর্মীদের কার্যক্রম অনেক বেগবান হয়ে থাকে ।
একটানা বার বছরের উপর ক্ষমতা থাকাকে ক্ষমতা পাকাপোক্ত হিসেবে মনে করা যায় না।গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেক কর্মীদের নিষ্ঠার সাথে সততা নিয়ে জনগণের কল্যাণে নিবেদিত থাকতে হবে।যাহা বঙ্গবন্ধু মুজিবের লালিত সপ্ন ছিল ।