সংবাদ ডেস্ক: করোনার এই সময়েও ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি লটারি শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। সে ক্ষেত্রে ১৪ বা ১৫ ডিসেম্বর থেকে অনলাইন আবেদন শুরুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমানো হচ্ছে আবেদন ফি। এসব প্রস্তাব রেখেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে প্রস্তাবিত ভর্তি নীতিমালা। শিগগিরই তা চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মাউশি অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত ভর্তি নীতিমালা আমরা পেয়েছি। তাদের প্রস্তাবিত তারিখগুলোও ঠিক রাখা হতে পারে, আবার দু-এক দিন এগোনো-পেছানোও হতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় করোনা আক্রান্ত, তাই বিকল্প উপায়ে হলেও শিগগিরই ভর্তি নীতিমালা জারি করা হবে।’
মাউশি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার ঢাকা মহানগরীর ৪৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণি রয়েছে এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৭। প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শূন্য আসন রয়েছে প্রায় ১২ হাজার। তবে প্রথম শ্রেণিতে আসন রয়েছে মাত্র এক হাজার ৩০০।
বিগত বছরগুলোতে শুধু প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করত স্কুলগুলো। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পিইসির নম্বরের ভিত্তিতে এবং নবম শ্রেণিতে জেএসসির নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি করা হতো। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে নেওয়া হতো লিখিত পরীক্ষা। কিন্তু এবার করোনার কারণে সব শ্রেণিতেই লটারির মাধ্যমে ভর্তির সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত ভর্তি নীতিমালায় আগামী ১৪ বা ১৫ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন শুরুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে ১২ দিন আবেদনের সুযোগ রাখা হচ্ছে। আগামী ২৯ বা ৩০ ডিসেম্বর লটারি অনুষ্ঠানের প্রস্তাবিত তারিখ বলা হয়েছে। তবে জানুয়ারির প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুলে ভর্তি হওয়া যাবে। এবার করোনার কারণে যেহেতু ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না, তাই আবেদন ফি কমানো হচ্ছে। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই আবেদন ফিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ১১৫ টাকা ও বেসরকারি স্কুলে ১৫০ টাকা। অনলাইন ভর্তি আবেদনে কারিগরি সহায়তা দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ফোন কম্পানি টেলিটক। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি নীতিমালার সঙ্গে মিল রেখেই বেসরকারি বিদ্যালয় ভর্তি নীতিমালাও তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দু-এক দিন আগে-পরে তারাও তাদের আবেদন গ্রহণ ও লটারির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমরা প্রস্তাবিত ভর্তি নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ীই আমরা ভর্তি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করব।’
এবারও রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ নামে তিনটি পৃথক গুচ্ছে ভাগ করা হচ্ছে। আগে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি গুচ্ছ থেকে একটিমাত্র স্কুল পছন্দ করার সুযোগ পেলেও এবার পাঁচটি স্কুল পছন্দ করার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া ক্যাচমেন্ট এরিয়া (এলাকা কোটা) ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে।
তবে প্রথম শ্রেণি বাদে অন্যান্য শ্রেণিতে লটারির সিদ্ধান্তে খুশি নন অনেক অভিভাবক। রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভর্তীচ্ছু এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমার ছেলে রাজউকে ভর্তির জন্য করোনার মধ্যেও এক বছর ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। লিখিত পরীক্ষা হলে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারতাম, আমার সন্তান উত্তীর্ণ হবে। কিন্তু এখন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যেহেতু এখনো সুযোগ আছে, তাই সব শ্রেণিতে লটারির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছি।’
জানা যায়, রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সব সময়ই ভর্তিযুদ্ধ হলেও এবার পরীক্ষা না হওয়ায় ভাগ্যের ওপরই চেয়ে আছেন অভিভাবকরা। ঢাকা মহানগরীতে ৩২১টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও মানসম্পন্ন স্কুল রয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২৫টি। ফলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আগ্রহ ওই স্কুলগুলো ঘিরে। বাকি স্কুলগুলোতে আসন খালি থাকলেও অভিভাবকদের আগ্রহ খুব একটা নেই।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ৩০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে অবকাঠামো, খেলার মাঠ, শিক্ষকসহ অন্যান্য সুবিধা থাকার পরও সেখানে অভিভাবকদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা অন্য কোনো স্কুলে ভর্তির সুযোগ না পেয়েই এসব স্কুলে ভর্তি হয়। এসব স্কুলে সারা বছরই শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থাকে। এদিকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও এবার তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছে না তারা।