পাবনার চাটমোহরে বিনাহালে রসুন আবাদে ঝুঁকেছে কৃষক। গত বছর আবাদকৃত রসুনের দাম তুলনামূলক কম পাওয়ার পরও কৃষকরা রসুন আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। কৃষকের কথা দাম কম হলেও অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ অনেক বেশি।
চলনবিলের সাদা সোনা বলে খ্যাত রসুনের আবাদ এ অঞ্চলের কৃষকের অন্যতম অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। দুই দশকের অধিক সময় ধরে বিনাহালে রসুনের আবাদ হচ্ছে এ উপজেলাতে। এক সময় মাত্র ৮/৯ শত হেক্টর জমিতে বিনাহালে রসুনের আবাদ হতো চাটমোহরে। এখন সেই আবাদের পরিধি বেড়েছে। ৬ হাজার হেক্টর জমিতে এখন বিনাহালের রসুনের আবাদ হচ্ছে।
চাষিরা জানান,আমন ধান কাটার পর জমি থেকে দ্রুত আগাছা পরিস্কার করে জমি ভেজা বা কাদা মাটি থাকতেই প্রতি এক বিঘা জমিতে ৩০ কেজি টিএসপি,২৫ কেটি পটাশ এবং ১৫ কেচি জীপসাম সার ছিটিয়ে পরের দিনই সারিবদ্ধভাবে বীজ রোপন করতে হয়। এক বিঘা জমিতে ২ মণ বীজ লাগে। তারা জানান,বীজ রোপন করার পরই খড় বা বিচালি দিয়ে পুরো জমি ঢেকে দিতে হয়। এক মাস পর পানি সেচ দিয়ে ১০ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হয় বিঘাপ্রতি। এক পদ্ধতিতে রোগ বালাই নেই বললেই চলে। একশত দিনের মধ্যে ফসল ঘরে ওঠে। বিঘাপ্রতি উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ মণ পর্যন্ত। রসুন রোপনে মুখ্য ভূমিকা রাখেন নারীরা। বীজ বাছাই ও রোপনে কাজ করেন তারা। একজন মহিলা কৃষিশ্রমিক প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরী পান। এ ক্ষেত্রে পুরুষের মজুরী ৬০০ টাকার কম নয়। তাই কৃষক নারী শ্রমিকের উপরই বেশি ভরসা করেন।
উপজেলার দাথিয়া কয়রাপাড়ার কৃষক ইজাবত আলী জানালেন,এক বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে কৃষিশ্রমিকের মজুরী বেড়ে যাওয়ায় খরচও বেড়েছে। তারপরও দাম কম হলেও ৬০ হাজার টাকার রসুন বিক্রি করা হয়। দাম বেশি হলে লক্ষাধিক টাকার বেশি পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,পাবনা জেলার মধ্যে চাটমোহর উপজেলাতেই কেবল এই পদ্ধতিতে (বিনাহালে) রসুনের আবাদ হয়। ফাশের নাটোর জেলার গুরুদাসপুর,সিংড়া,তাড়াশ উপজেলাতে এই পদ্ধতি চাষ হয় রসুনের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কুন্তলা ঘোষের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে,তিনি আবাদের লক্ষ্যমাত্রাসহ বিস্তারিত পরে জানানোর কথা বললেও আর কিছু জানাননি। তবে একাধিক কৃষিবিদ জানান,বিনাহালে রসুন আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষক। প্রতিবছর বাড়ছে মসলা জাতীয় এই ফসলের আবাদ।
সূত্র: এফএনএস।