1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ০৭:১৫ অপরাহ্ন

আহত বেল্লাল স্বপ্ন দেখেন নতুন বাংলাদেশের

ডিডিএন ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৫৪ সময় দর্শন

জীবিকার খোঁজে ২০১২ সালে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার মো. বেল্লাল হোসেন। ঢাকায় গিয়ে প্রথম ১০ বছর দিনমজুরের কাজ করেছেন। এরপরে আরেকটু ভালো থাকার জন্য ২০২১ সালে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ডেমরা কাজলা ব্রিজ এলাকায় ডাব বিক্রি দিয়ে শুরু করেন নতুন জীবন।

নিজ জেলা পিরোজপুর থেকে ডাব এনে এখানে বসে বিক্রি করেন। এই ব্যবসা শুরু করার পর থেকেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। স্ত্রী উম্মে হাফছা (২১), একমাত্র সন্তান মাহমুদুল হাসান (৩) এবং ছোট ভাই বাদলকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল তার।

কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে আহত হন বেল্লাল হোসেন (৩০)। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও তার ডান হাতটি প্রায় অকেজো। এখন তিনি স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না।

পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) উপজেলার ইন্দুরকানী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ ইন্দুরকানী গ্রামের আব্দুল বারেক হাওলাদার( ৬৫) এবং মমতাজ বেগম (৫৫) দম্পতির ছয় ছেলের মধ্যে বেল্লাল হোসেন দ্বিতীয় সন্তান। তাদের নিজেদের কোন চাষযোগ্য জমি নেই। নিজ গ্রামে আব্দুল বারেক হাওলাদারের রয়েছে একটি চায়ের দোকান। অভাবের সংসারে বড় চার সন্তানকে তেমন লেখাপড়া করাতে না পারলেও ছোট দুই সন্তান, মাসুদ (১৭) স্থানীয় একটি হাইস্কুলে দশম শ্রেণিতে এবং মারুফ( ১৩) মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত। বাবা -মা এবং ভাইদের স্বপ্ন রয়েছে এ দুজনকে উচ্চশিক্ষিত করার।

ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ডেমরা কাজলা ব্রিজ এলাকার ভাড়া বাড়িতে বসে বাসস’র এই প্রতিনিধির সাথে কথা হয় বেল্লাল হোসেনের। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো আতঁকে ওঠেন তিনি।

ঘটনার বর্ণনায় বেল্লাল বলেন, দিনটি ছিল ১৯ জুলাই (শুক্রবার)। রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলন তখন তীব্র আকার ধারণ করেছিল। ঐদিন ফজরের নামাজ শেষে তিনিও রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। বিবেকের তাড়নায় ডেমরার কাজলা ব্রিজ এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে তিনিও শামিল হন।

সময় যত বাড়তে থাকে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা ও তত বাড়তে থাকে।

অন্যদিকে ছাত্র জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে পুলিশ নির্বিচারে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে সকাল নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশের ছোঁড়া একটি গুলি লাগে বেল্লালের ডান হাতে। তিনি-সহ আরো অনেকে আহত হন।

বেল্লাল বলেন, গুলি লাগার পরে প্রথমে আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। শুধু কানের কাছে হাড় ভাঙ্গার একটি শব্দ পেয়েছি। এরপরে দেখি আমার ডান হাত ঝুলছে এবং রাস্তায় রক্ত পড়ছে। আশপাশের লোকজন আমাকে ধরাধরি করে কাজলা ব্রিজ এলাকার একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে তারা চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপরে শাহজাহানপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তারাও পুলিশ কেস বলে আমাকে কোনো চিকিৎসা দেয়নি।

পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেল থেকে আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু আহত রোগীদের চাপের কারণে ঐদিনই আমাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে পরবর্তীতে আবার যাওয়ার জন্য বলা হয়। এদিকে বাসায় ফেরার পরে একদিকে যেমন হাতে তীব্র যন্ত্রণা অন্যদিকে হাত কেটে ফেলা লাগে কিনা সেই চিন্তায় আমি অস্থির। সারারাত ঘুম হয়নি। নিকটজনদের পরামর্শে পরের দিন মোহাম্মদপুরের প্রাইম হাসপাতালে ভর্তি হই।

সেখানে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এবিএম রুহুল আমিন অপারেশন করেন।

মুঠোফোনে বেল্লালের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা. এ বি এম রুহুল আমিন বাসস’কে বলেন, বেল্লালের ডান হাতের উপরের অংশে গুলি লেগে বেরিয়ে যায়। তার হাত অপারেশন করে এক্সটার্নাল ফিক্সেটর (রড) লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে সাত মাস রাখতে হবে। এরপরে আবার অপারেশন লাগতে পারে।

বেল্লাল বলেন, অপারেশন এবং ঔষধপাতিসহ এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু তিনি সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোনোরকম আর্থিক সহযোগিতা পাননি। তবে আর্থিক সহযোগিতা না পেলেও বেল্লাল এই ভেবে আনন্দ পান দেশতো ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে।

বেল্লালের স্ত্রী উম্মে হাফসা বলেন, আমার স্বামীকে নিয়ে আমি গর্বিত। তিনি আজকে আহত হয়েছেন কিন্তু দেশ জালিম মুক্ত হয়েছে। এখন একটাই চাওয়া আমার স্বামী যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন, আগের মত ব্যবসার হাল ধরতে এবং আমাদের সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন।

কথা বলার এক পর্যায়ে ভারী হয়ে আসে বেল্লালের কন্ঠ। কারণ, আহত হওয়ার পর থেকে একমাত্র সন্তানকে আগের মতো কোলে নিয়ে ঘুরতে পারেন না। গোসল করে নিজের লুঙ্গি নিজে ধুতে পারেন না। নিজে হাত দিয়ে খেতে পারেন না। হাতের যন্ত্রণায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে পারেন না। এছাড়া আদৌ আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিনা এ চিন্তা ও সব সময় তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

তারপরেও বেল্লাল স্বপ্ন দেখেন নতুন একটি বাংলাদেশের। ছাত্র-জনতার এই রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন স্বাধীন দেশে থাকবে না কোনো বৈষম্য। সকলেই তার নাগরিক অধিকার ভোগ করবে সমানভাবে। আর কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে না। বর্তমান সরকার এবং পরবর্তীতে যারাই ক্ষমতায় আসুক শহিদ এবং আহতদের পরিবারের পাশে থাকবে এই প্রত্যাশা বেল্লালের।

বাসস

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host