একটি মাদ্রাসার দু’জন অধ্যক্ষ। দু’জনেই নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করছেন। একজন ৭ বছর আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করে অদ্যাবধি চেয়ারে আছেন। আরেকজন গত এক বছর আগে দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এমন অবস্থা বিরাজ করছে পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের এনায়েতুল্লাহ ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসায়। মাদ্রাসাটির ইআইএন নং ১২৫৪১৪ ও কোড নং ১৩৪৬১। ৭ বছর আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন মাদ্রাসাটির আরবি বিভাগের শিক্ষক মওলানা মোঃ আবু ইসহাক আর ১ বছর আগে দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হলেন মাদ্রাসাটির রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ রবিউল করিম। এনিয়ে দু’জনের মধ্যেই চলছে রশি টানাটানি। দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ-পালটা অভিযোগ। মোঃ রবিউল করিম গত ১১ সেপ্টেম্বর চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট মওলানা আবু ইসহাকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে,আবু ইসহাক অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আর্থিক অনিয়মসহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত। অভিযোগে বলা হয়েছে,ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালে আবু ইসহাক বিগত দিনে অধ্যক্ষ নিয়োগে কোন পদক্ষেপ নেননি। দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ৭ বছরে মওলানা মোঃ আবু ইসহাক নানা অনিয়ম আর দূর্নীতি করেছেন। তার কারণে মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মোঃ রবিউল করিম আরো বলেন,গত ৫/১০/২০২৩ ইং তারিখে মাদ্রাসার অধ্যক্সসহ ৭টি পদে নিয়োগ সংক্রান্ত সাচিবিক দায়িত্বসহ গভর্নিং বডি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে। আমি ওই তারিখ থেকে যথারীতি দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু আবু ইসহাক অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে রেখেছেন। তিনি বলেন,যেহেতু নিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে,সে কারণে আপনার দায়িত্ব শেষ। তিনি কোন নিয়ননীতির তোয়াক্কা করেননা। তিনি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন।এ ব্যাপারে মাদ্রাসার অপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মওলানা মোঃ আবু ইসহাক বলেন,শুধুমাত্র নিয়োগকালীন সময়ের জন্য তাকে সাচিবিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার দায়িত্বও শেষ হয়েছে। ফলে সে পূর্বের পদে বহাল হয়েছেন। আমি পুনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি। আবু ইসহাক বলেন,রবিউল করিম এখন নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সে মাদ্রাসার প্যাড ও সিল ব্যবহার করছেন। তা গর্হিত কাজ। সে যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ,গত ৮ মাস কেন দাবি করেননি বা তার নিকটাত্মীয় সাবেক সভাপতিকে দিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেননি। সরকার পূর্বের কমিটির সভাপতিকে অপসারণ করেছেন। ফলে সেই সভাপতির যে কোন সিদ্ধান্ত বাতিল। আবু ইসহাক বলেন,আমার বিরুদ্ধে রবিউল করিম যে সকল অভিযোগ করেছেন,তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এ ধরণের অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারি।চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেদুয়ানুল হালিম জানান,অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে দু’জন নিজেদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করায় শিক্ষক-কর্মচারি ও এলাকাবাসীর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এক সময়ের নামকরা এই মাদ্রাসাটির শিক্ষার পরিবেশ অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীর অভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। নিজেদের মধ্যে কাদা ছেঁড়াছুড়ি নিয়ে আলোচনা চলছে বিভিন্ন স্থানে।