সম্পাদকীয় :
একটি স্থানীয় অনলাইন পত্রিকায় ‘‘ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক,বাড়ছে অপরাধ ‘’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই সংবাদে প্রতিবেদকের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী উপজেলার অন্ত:ত ৪১টি স্থানে মাদকের রমরমা ব্যবসা ও সেবন চলছে । ব্যাপরটা কতটা ভয়ংকর তা সহজেই অনুমেয়।
আমরা জানি মাদকের বিরুদ্ধে ভাঙ্গুড়ার সাবেক মেয়র যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন। তিনি নিজে অভিযান পরিচালনা করে অনেকাংশে নির্মুল করতেও সক্ষম হন। তারপরও হাতে গোনা দু’একটি জায়গায় কারবার চলে। অতপর,এত স্বল্প সময়ে মাদকের অগাধ বিস্তার সুশিল সমাজকে উদ্বিঘ্ন করে তুলেছে।
মেয়র সাহেব পদ ছেড়ে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান হয়েছেন। এমনি সময় এই সংবাদ প্রকাশ হলো। শুধু তাই নয়,এসব কারবারের স্থানে যে অর্থ লেন-দেন হয়, তার সাথে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের যোগসাজস রয়েছে বলেও খবরে ইঙ্গিত করা হয়েছে । যে কারণে মাদকের রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন।
মাদকের থাবায় নষ্ট হচ্ছে উঠতি বয়সের কিশোর ও যুব সমাজ । এই সব নষ্ট ছেলে ও যুবকেরা চুরি,ছিনতাই,ধর্ষন প্রভৃতি অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের পরিবারে সৃষ্টি হয়েছে অশান্তির দাবানল। পিতা ছেলেকে জেলে পাঠিয়েছে এমন নজিরও রয়েছে। সর্বনাশা মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করছে জেনেও যারা এই কাজে জড়িত আর যাই হোক দেশ প্রেমিক হতে পারেনা।
সংবাদে আরো প্রকাশ করা হয়েছে,যে,বাসস্ট্যান্ডে সিএনজি চালকেরা প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে মাতলামি করেছে ! সিএনজি সমিতির সভাপতি আব্দুল জাব্বারের নামটি পর্যন্ত খবরে উঠে এসছে। তবে দুর্ভাগ্য এটাই যে,কখনো তাদের কিছু হয়না। সরকার উপজেলা থানা কমপ্লেক্সে অনেক পদের অফিসার বসিয়েছেন,একটাই লক্ষ্য জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আইন শৃংখলা রক্ষা করবেন তারা। মাদকের থাবায় যুব সমাজ যদি নষ্টই হয়ে যায় ! তাহলে রাষ্ট্রের কি হবে ? যারা আগামী দিনের কর্নধর,তারা কি এভাবেই শেষ হবে ?
পুর্বতন ওসি মো. রাশিদুল ইসলামের কিছু অর্জন ছিল। তিনি মাদকের পাশাপাশি চোর,ছিনতাইকারি ও আন্ত:জেলা ডাকাত দলের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসায় ছিনতাই ও চুরির উপদ্রব কমে গিয়েছিল। উনি ছিলেন ভাঙ্গুড়ায় একবারেই নতুন। কিন্তু বর্তমান ওসি নাজমুল হক,তিনি পুর্বে এখানে তদন্ত অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ফলে তার সবকিছু নখদর্পণে থাকার কথা। এজন্য তার তৎপরতা ও আ্যকশন অনেক বেশি আশা করেন এখানকার অধিবাসীরা। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নের দায়িত্বে পুলিশের একজন সাব-ইনস্পেকটর রয়েছেন। তারা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করলে ৪১টি মাদক স্পট কখনো বহাল থাকতে পারেনা। এই মূহুর্তে পুলিশের করণীয়ই হবে- স্পটগুলোতে অভিযান পরিচালনা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের দ্বারা নজরদারি কমিটি গঠন করা । যাতে পুনরায় এখানে মাদক কারবারিরা জমায়েত হতে না পারে। এমন পরামর্শই অভিভাবক মহলের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হাসনাইন রাসেল মাদক দমনে পৌরসভায় যে ভুমিকা রেখেছিলেন, উপজেলার ক্ষেত্রেও তার একই ভুমিকা সবাই দেখতে চান। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সংবাদকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধ্যানী টিম গঠন করা যেতে পারে। তৃণমুল থেকে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে আইন শৃংখলা বাহিনী যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে যারা কর্মরত রয়েছেন তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এসব মাদক কারবারি ও সেবকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন। উপজেলা আইন শৃংখলা মিটিং এ যে সিদ্ধান্তগুলো হয় তার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং পরবর্তী সভায় আপডেট উপস্থাপন করতে হবে।
তবে আইন মানাতে যদি শাস্তির ব্যবস্থা না থাকে তখন আইন আর কেউ মানতে চায়না। ফলে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয় সমাজ। আমরা তা হতে দিতে পারিনা। সবার প্রতি আহবান মাদক নির্মুলে শতভাগ সততার সাথে আইন শৃংখলা বাহিনীকে তথ্য দেবার।
মাদকের প্রতিকী ছবি সংযুক্ত