জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানকে পুনরায় অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটা একদিন বের হবে।
তিনি বলেন, হত্যার বিচার হয়েছে। তবে, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল, একদিন সেটাও বের হবে। কিন্তু, আমাদের কাজ একটা ছিল- প্রত্যক্ষভাবে যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করা। আর সব থেকে বড় কাজ দেশের মানুষের উন্নয়ন করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন করাটাকেই আমি সব থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তাই, পেছনে কে ষড়যন্ত্র করেছে, কি করেছে সেদিকে না গিয়ে আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এই ক্ষুধার্ত দরিদ্র মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের জীবনমান উন্নত করা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (১ আগস্ট) সকালে আসন্ন শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের জাতির পিতা স্মৃতি জাদুঘর সংলগ্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন।
জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ’উদ্ধৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রক্ত জাতির পিতাও দিয়ে গেছেন। কারণ, যখন এদেশের মানুষকে তিনি মুক্ত করেছেন তখন যারা স্বাধীনতাবিরোধী বা যারা বিজয় চাননি তারা তাকে হত্যা করেছে।’
এই সময় প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক-রশিদের স্বেচ্ছায় বিবিসিকে দেওয়া ইন্টারভিউ অনুযায়ী সাবেক সেনা শাসক জিয়াউর রহমানকে নেপথ্য শক্তি হিসেবে উল্লেখের তথ্য এবং পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে খুনিদের পুরস্কৃত করায় জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, এমপি বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বেগম মতিয়া চৌধুরী দুঃস্থ কৃষকদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার ভয়াল থাবা সত্ত্বেও মানুষের খাদ্যের এবং তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা সরকার করে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ যেন কোনো দিন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্যই জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নিজের দলের ভেতরে খন্দকার মুশতাক যেমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, আবার অনেকেই তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আর এই ঘটনা ঘটাতে যেহেতু সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্য তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু, উচ্চ পর্যায়ে যদি তাদের পক্ষে কেউ না থাকতো, তবে, এটা কখনো সম্ভব ছিল না।
সরকার প্রধান বলেন, উচ্চ পর্যায়ে তাদের সঙ্গে কে ছিল সেটা তো ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কর্নেল ফারুক ও রশীদ বিবিসিকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল সেই সাক্ষাৎকারেই বলেছিল, উপ-সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল, সম্পর্ক ছিল এবং সফল হতে পারলে সে তাদের পাশে থাকবে এই কথাও দিয়েছিল এবং সব রকম সহযোগিতাও করেছিল।
কাজেই, মুশতাক-জিয়ার যেই সখ্যতা এবং তাদের যে এই কাজের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততা স্পষ্ট উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের যেই আদর্শ সেই আদর্শ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়ে যায়। যদিও, বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না- এটা ৭ মার্চের ভাষণেই জাতির পিতা বলে গেছেন। সেই ৭ মার্চের ভাষণ যেটা এক সময় নিষিদ্ধ ছিল সেই ভাষণও আজ বিশ্বের সবচেয়ে উদ্বুদ্ধ-কারি একটি ভাষণ হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। বাসস