বিশেষ প্রতিনিধি,ভাঙ্গুড়া থেকে :
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মুজিব বর্ষের উপহার হিসাবে প্রথম পর্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বাড়ি পেয়ে ভালো আছেন দশ গৃহহীন পরিবার। রবিবার (১১ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় সুন্দর সাজানো সব আধা পাকা নতুন বাড়িতে সুখেই বসবাস করছেন এসব পরিবার। তাদের ঘর ছিলনা,ছিলনা এক খন্ড জমি। অসহায় জীবন যাপন করছিলেন তারা। কোনো কানো নারী আবার বিধবা হয়ে অবর্ননীয় কষ্ট পোহাচ্ছিলেন।
ভাঙ্গুড়া উপজেলার এরকম দশ ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী জমি দিলেন আবার সেখানে নতুন পাকা ঘর নির্মাণ করে দিলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আশরাফুজ্জামান এর নির্দেশনায় ও সহকারী কমিশনার (ভুমি)মো: কাওছার হাবীবের সার্বিক সহযোগিতায় এবং উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেনের তত্তবধানে ‘ক’ তফশিলের ভুমি বাছাই ও সংস্কার করে সেখানে পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়।
উপজেলার মন্ডুতোষ ইউনিয়নের জালেশ্বর মৌজার টুনিপাড়া গ্রামে তিনটি পরিবার ও অষ্টমণিষা ইউনিয়নের লামকান মৌজায় সাতটি পরিবার কে ভুমিসহ পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ওই সব ভুমিসহ বাড়ি ভুমিহীনদের নামে কবুলিয়ত রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিটি বাড়িতে দেওয়া হয়েছে পল্লি বিদ্যুত সংযোগ।
দু’কক্ষ বিশিষ্ট ইটের দেওয়াল ও মজবুত রুঙিন টিনের তৈরি হলুদ রঙের প্রতিটি ঘর সারিবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে রয়েছে। দু’পাশে প্রকৃতির আবহ আর কৃষি ক্ষেতের সবুজ বেষ্ঠনি দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন এখানে কোনো রিসোর্ট পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।
এসব বাড়ি যাতে বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য দু’পাশে কাঠের গুল পুতে এবং ড্রামসীট দিয়ে প্যালাসাইট নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে প্রটেকশন দেওয়াল। ফলে প্রত্যেকটি বাড়ি রয়েছে সুরক্ষিত। প্রতিটি বাড়ি নতুন নির্মাণ হলেও একটি ঘরের দেওয়াল বা মেঝে কোনোটারই সামান্য চির বা ফাটল চোখে পড়েনি।
লামকান গ্রামের হাওয়া খাতুন বলেন,আমার স্বামী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী । ঘরবাড়ি না থাকায় পরের বাড়ি থাকতাম। এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাকা ঘরে থাকি। সুন্দর ঘরটি পেয়ে মনে হয় আমি খুব সুখে আছে। এখন বৃষ্টিতে ভিজতে হয়না,গরমেও কষ্ট নেই। বিছানার উপরে ঘোরে বৈদ্যুতিক ফ্যান,তাতে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সহজ চাপে অগভীর নলকুপ থেকে পাচ্ছি বিশুদ্ধ পানি। আমাদের জন্য এমন সব ব্যবস্থা করা জাতির জনকের কন্যার পক্ষেই সম্ভব। তার জন্য আমরা প্রাণ ভরে দোয়া করি।
একই গ্রামের লক্ষী রানী কর্মকার বলেন, স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। বিধবা নারী কোথায় থাকি ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছিলেম না। তখন প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে এই নতুন বাড়ি দেওয়া হলো আমাকে। জাতির জনকের কন্যার উপহার পেয়ে এখন আমি তিন লাখ টাকার সম্পদের মানুষ।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া আরেক নারী বিউটি খাতুন বলেন, আমরা শুধু সুন্দর আর নতুন বাড়িই পাইনি, সেই সঙ্গে পেয়েছি আমাদের দেখা শোনার জন্য অত্যন্ত দয়ালু সব অফিসার। ইউএনও আশরাফুজ্জামান স্যার,এসি ল্যান্ড কাওছার স্যার ও ইঞ্জনিয়ার জাহাঙ্গির স্যারকে। তারা প্রায়শই আমাদের দেখতে আসেন। রবিবার(১১ জুলাই) বিকালেও তারা আমাদের দেখতে এসেছিলেন ।
এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো: বাকি বিল্লাহ ও ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেলও বহুবার এখানে এসেছেন বলে ওই সব পরিবারের সদস্যরা জানান। তারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে এসে তারা খোঁজ খবর নেন এবং সহযোগিতা দেন। তারা আরো বলেন,পাবনার জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের দেখতে এসে ঈদ উপহার দিয়ে গেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বাস্তবায়নে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসাবে এই প্রকল্পে কাজ করতে পেরে নিজেকে সম্মানিত ও গৌরবান্বিত মনে করছি। তিনি আরো বলেন, পাবনা – ৩ এলাকার মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো: মকবুল হোসেন মহোদয় ও পাবনার জেলা প্রশাসক মহোদয় এর পরামর্শ ও নির্দেশনা পেয়ে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মো: বাকি বিল্লাহ ও পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আল্লাহর রহমতে প্রকল্পের কাজ সুসম্পন্ন হয়। প্রথম পর্যায়ের এই উপহারের প্রতিটি ঘর নির্মাণে ১লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয় হয় বলেও তিনি জানান।