ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা মামলায় গ্রেফতার দুই আসামির মধ্যে অন্যতম তারই বন্ধু অমি।
সোমবার প্রধান আসামি নাসির উদ্দিন মাহমুদ গ্রেফতারের সময়ও অমির পুরো নাম আলোচনায় আসেনি। পরীমনি যে মামলা করেছেন, সেখানে শুধু অমি নামই উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাসির উদ্দিন মাহমুদকে ক্লাবের নির্বাহী কমিটি থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকেই অমির পুরো নাম জানা যায়। তার নাম তুহিন সিদ্দিকী অমি। তিনিও এই ক্লাবের সদস্য।
তুহিন সিদ্দিকী অমিকেও ইতোমধ্যে বহিষ্কার করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
পরীমনির ভাষ্য মতে, তাকে ওই ক্লাবে সুকৌশলে নিয়ে গিয়েছিলেন অমিই। বিষয়টি নাসিরের সঙ্গে পূর্বপরিকল্পনা করেই ঘটিয়েছেন অমি। তিনি যখন ক্লাবে নির্যাতিত হচ্ছিলেন তখন অমির ভূমিকায় বিস্মিত হন।
অমি পরীমনির কেমন বন্ধু যে, তার কথা গভীর রাতে সরল বিশ্বাসে অচেনা একটা ক্লাবে গেলেন?
নাসির গ্রেফতার হওয়ার পর সোমবার রাতে ঢাকার গুলশানে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এসে পরীমনি তার জবাব দেন।
বলেন, ‘আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমির কলেজ জীবনের বন্ধু অমি। সে হিসেবে আমার সঙ্গে দুই বছর ধরে ‘হ্যাই হ্যালো’। তবে ওই রকম ক্লোজড না আমরা। সিঙ্গাপুর ট্রেইনিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন অমি; এর বাইরে খুব বেশি কিছু জানি না আমি তার সম্পর্কে।
জিমির কারণে পরীমনি বাসায় অমির যাতায়াত ছিল- এমনটাই জানিয়েছেন এ নায়িকা।
প্রধান আসামি নাসির মাহমুদের সঙ্গে তার আগে পরিচয় ছিল না বলে দাবি করেছেন পরীমনি।
তিনি বলেন, ‘আসামিদের মধ্যে কেবল অমিই তার পূর্ব পরিচিত। তার উপর ‘বিশ্বাস’ রেখেই সেদিন বিরুলিয়ায় তুরাগ নদীর তীরে সেই বোট ক্লাবে গিয়েছিলাম। বোট ক্লাবে যাওয়ার পর অমির ভিন্ন চেহারা দেখে আমি নির্বাক ও বিস্মিত হই। নাসির মাহমুদের সঙ্গে অমির আগে থেকেই পরিচয় ছিল।’
পরীমনির পোশাক ডিজাইনার জিমি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজধানীর আশাকোনা এলাকায় অমিদের বাসা। সিঙ্গাপুর ট্রেইনিং সেন্টার ছাড়াও আরও কিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে অমির।’
সংবাদ সম্মেলনে অমিকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করতে দেখা গেছে পরীমনিকে। পরীমনি তার মামলার এজাহারে বলেছেন, দুই নম্বর আসামি অমি ‘পরিকল্পিতভাবে’ ৮ জুন রাতে তাকে বোট ক্লাবে নিয়ে যায়।
পরীমনি এজাহারে আরো বলেছেন, গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও অমির সঙ্গে দুটো গাড়িতে করে উত্তরার দিকে যাই। আমার ছোটবোনও সঙ্গে ছিল। পথে জিমিকে অমি বারবার রিকোয়েস্ট করেন, বেরিবাঁধ এলাকার ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। এখন তো রাস্তা ফাঁকা। বেশিক্ষণ লাগবে না। জাস্ট দুই মিনিটের ব্যাপার একটু টাইম দে। এমন সব বাহানা দিয়ে বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি থামান তিনি। অমি আমাদের ভেতরে ঢোকার আমন্ত্রণ জানায়।
সঙ্গে থাকা ছোটা বোন এসময় ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। অমি অভয় দেন। ক্লাবের পরিবেশ ‘অনেক সুন্দর’ বলে জানায়। বেনজির ভাইয়ের নাম বলেন। অমিকে বিশ্বাস করে ক্লাবে প্রবেশ করেন পরীমনি।
পরীমনি বলেন, ‘ছোট বোনসহ আমি বাথরুম ব্যবহার করে বের হতেই ১ নং বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভিতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি পানের প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমি ডেকে নেন। ভেতরে গিয়ে দেখি সবাই মাদ খাচ্ছে। ১ নং আসামি ওভার ড্রাংকড। তিনি আমাকে মদ্যপান করার জন্য জোরাজুরি করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নং আসামি (নাসির) জোর করে আমার মুখের মধ্যে বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন।’
পরীমনি জানান, মদ খেতে না চাইলে নাসির মাহমুদ তখন ‘অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ’ করতে থাকেন এবং ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন।
এসব কিছুর পরিকল্পনাকারী অমি জানিয়ে পরীমনি বলেন, ‘আমি ভিক্টিম। আমি যেখানে ইচ্ছা করলেও বের হতে পারিনি। আমি অমিকে বিশ্বাস করেই সেখানে গিয়েছিলাম। ওখানে বসেছিলাম বিশ্বাস করে। কফি খেতে ২৫ মিনিট লেট হচ্ছিল। আমরা যখন উঠে আসতে চাচ্ছিলাম, অমিই তখন বাধাটা দিচ্ছিল।’
প্রসঙ্গত, মামলার প্রধান আসামি ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি)। পরীমনিকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর নাসির মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমি ও শাহ এস আলম নামে আরেকজনকে বহিষ্কার করেছে বোট কর্তৃপক্ষ।