সংবাদ ডেস্ক: বিয়ে শাদি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিবাহের বিষয়টি আমাদের সমাজে একটি কঠিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের পরিবারেই এ বিষয়টি নিয়ে আগুন জ্বলছে। কেমন যেনো আমাদের হাত বাধা। আর আমরা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছি।
প্রচলিত নিয়মে আমরা চলে আসছি। যতই সহজ করার চেষ্টা করছি সমাজ আমাদের ততই কঠিন বাগডোরে বেধে ফেলছে। আমরা এর থেকে বের হতেও পারছি না। অতএব, বিয়ের বিষয়ে জটিলতা কাটাতে সর্বপ্রথম সমাজের মুরব্বিদের এগিয়ে আসতে হবে। শরীয়তে পাত্রী দেখার কিছু পদ্ধতি ও নিয়মের কথা বলা হয়েছে। আজ থাকছে ডেইলি বাংলাদেশের বিশেষ আয়োজনের দ্বিতীয় পর্ব-
চাচাত ভাই–বোন ও নিকটাত্মীয়দের বিয়ে করা
নিকটাত্মীয়দের ব্যক্তিগতভাবে বিয়ে করা জায়েজ। শরীয়তে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিছু লোক বলে যে, এসব বিয়ে সুখের হয় না। আসলে শরিয়তে এ বিষয়ে কিছু বলা নেই। এগুলো অভিজ্ঞতার বিষয়। যারা বলে হয়ত অভিজ্ঞতা থেকেই বলে। অভিজ্ঞতা সব সময় সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। যেহেতু শরিয়তে নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই এটা নিষিদ্ধ করা যাবে না। তবে কেউ যদি মনে করে, এটা করলে সমস্যা হবে তাহলে এর থেকে বিরত থাকতে পারবে।
ছেলে বা মেয়ের ব্যাপারে পরামর্শ করা
যে ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে আপনার সন্তানের সম্পর্ক করাবেন। তার ক্ষেত্রে উপরোক্ত গুণাবলী আছে কি না, এ বিষয়ে পরামর্শ করে নিবেন। এটা সুন্নাত। মেয়ে বা ছেলের যে ভালো চায় এমন কারো সঙ্গে পরামর্শ করা। ছেলের বা মেয়ের কোনো সমস্যা থাকলে স্পষ্ট করে বলা। বাস্তবতা সম্পর্কে জানানোও আবশ্যক। এমনিভাবে যদি এক বা একাধিক সম্মন্ধ যদি সামনে থাকে। তারপরও পরামর্শ করে যেটা ভালো হয়, যার সঙ্গে সম্পর্ক করলে ভালো সেটাই গ্রহণ করা উচিৎ।
হজরত ফাতেমা বিনতে কায়েস রা. কে তার স্বামী তালাক দেয়ার পর একই সময় হযরত মুআবিয়া ও হযরত আবুল জাহাম রা. বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। এক তালাকপ্রাপ্তা ফাতেমা বিনতে কায়েসকে একই সঙ্গে কুরাইশের আমিরের ছেলে আমিরে মুআবিয়া আর আবুল জাহাম প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে হযরত ফাতেমা বিনতে কায়েস রাসূলে কারিম (সা.) এর সঙ্গে পরামর্শ করলেন। রাসূল (সা.) বললেন, মুআবিয়া বড় ফকির। তাকে বিয়ে করার দরকার নেই। আর আবুল জাহাম এত কঠিন স্বভাবের মানুষ যে, তার কাঁধ থেকে লাঠি নামেই না। তাই এ দু’জনকে বাদ দিয়ে উসামা ইবনে জায়েদকে বিয়ে করো।
পছন্দের বিয়ে
ভারসাম্যপূর্ণ এক ধর্মের নাম ইসলাম। ইসলামে কোনো ধরণের বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি নেই। মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার কোনো বিধান ইসলামে রাখা হয়নি। মানুষের স্বাভাবের সঙ্গে যায় ও সহজে করতে পারে এমন বিষয়ই ইসলামের বিধান করা হয়েছে। এজন্যই ইসলাম মানুষের কুপ্রবৃত্তির প্রশ্রয় দেয়নি। নারী পুরুষের মিলন ইসলামে নিষিদ্ধ করলেও শরিয়ত এর একটি বৈধ পন্থাও বলে দিয়েছে। পৃথিবীতে বংশ বিস্তারের জন্য এটি প্রয়োজনীয় ছিল। প্রাকৃতিক অনুভূতি এবং আকাক্সক্ষা বাদ দিয়ে একটি বৈধ পদ্ধতি কোরআন ও সুন্নাহ অনুমোদন দিয়েছে। এর নামই বিবাহ। শরিয়ত পুরুষ ও নারীদের পছন্দ ও অপছন্দ করার পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের বল প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। অন্যদিকে পুরুষ ও নারীদেরকে অভিভাবকদের উপর আস্থা রাখতে উৎসাহিত করেছে।
পছন্দের বিয়ের অর্থ যদি এটা নেয়া হয় যে, আপনি যাকে ভালোবাসেন বা পছন্দ করেন, বিয়ের আগে তার সঙ্গে মেলামেশা করেন তাহলে এটা নাজায়েজ। এটা হারাম হবে। উভয়ের পরিবার যদি একমত হয় তবে তাদের শীঘ্রই বিবাহ করা উচিত। ছেলে মেয়েরা বর্তমান সময়ে নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেন। পরবর্তিতে তাদের ভালোবাসায় ঘাটতি দেখা দেয়। তাদের বিয়ে ভেঙ্গে যায়। বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তাই সবার উচিত পারিবারিকভাবে অভিভাবকদের মাধ্যমে খান্দানি মেয়েকে বিবাহ করা। সব দিক দেখে বিয়ে করা। অভিভাবকদের সম্মতিতে যে বিয়ে হয় তাতে বরকতও থাকে। আল্লাহ পাক আমাদের কবুল করুন, আমিন।