ভাঙ্গুড়া(পাবনা)প্রতিনিধি :
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এক কলেজ ছাত্রী পুত্রবধু স্বীকৃতির দাবিতে শ্বশুর বাড়ি উঠে মঙ্গলবার থেকে টানা অবস্থান করছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মন্ডতোষ ইউনিয়নের দিয়ারপাড়া গ্রামে। ওই কলেজ ছাত্রীর নাম মেহরিন সুলতানা । সে উপজেলার নৌবাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে এবং সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী।
জানাগেছে, মেহরিন সুলতানা (২০) প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে সম্প্রতি উপজেলার দিয়াপাড়া গ্রামের আকবর আলীর ছেলে খাইরুল ইসলাম(২২) কে কোর্ট ম্যারেজ করে। কিন্তু স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি না পেয়ে মঙ্গলবার বিয়ের কাবিন ও কোর্টের এফিডেভিটের কাগজপত্র নিয়ে শ্বশুর বাড়ি হাজির হয়। মেয়েটি শ্বশুর বাড়িতে ঢুকে নিজেকে খাইরুলে স্ত্রী বলে পরিচয় দেয়। তখন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে চর-থাপ্প্র মারে এবং ঘার ধরে ঘর থেকে বের করে দেয়। তারপরও মেয়েটি ঐ বাড়ির উঠানে বসে থাকে। এভাবেই একটি শীতের রাত পার করে সে। তার সঙ্গে মেহরিনের মা,চাচা ও গ্রামের কয়েকজন ওই উঠানে বসে রাত কাটান। বুধবার বিকালে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেহরিনকে শ্বশুর আকবর আলী তার পুত্রবধু হিসাবে মেনে নেয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে মেহরিনের স্বামী খাইরুল ইসলাম স্ত্রীকে বাড়িতে তুলে দিয়েই পালিয়েছে। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক আলোচিত হওয়ায় পুলিশের এসআই মোদাচ্ছের মঙ্গলবার রাতে ঘটনাস্থলে যান। তবে বিষয়টি নারী ও শিশু অধিকার সম্পর্কিত হওয়ায় তারা মেয়েটিকে আইনগত সহায়তা দিতে পারেননি বলে ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান।
মেহরিন সুলতানা জানান,এক বছর আগে খাইরুলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সুযোগে তাদের শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। মেহরিন গর্ভধারণ করে। তখন খাইরুল শর্ত দেয় যে গর্ভপাত না করলে সে তাকে বিয়ে করবে না। তখন ওষুধ খেয়ে গর্ভপাত করানো হয়। মেহরিন আরো জানায়,তাকে খাইরুলের স্ত্রী হিসাবে মেনে না নিলে শ্বশুরবাড়িতেই সে আত্মহত্যা করবে।
খাইরুল পলাতক ও ফোন বন্ধ রাখায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
খাইরুলের বড় বোন আশা খাতুন বলেন,মেহরিন জালিযাতির মাধ্যমে কাবিন নামা তৈরি করে আমার ভাইকে ফাঁসাতে জোরপুর্বক আমাদের বাড়ি এসে উঠেছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হাসনাৎ জাহান বলেন,সামাজিক ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায় কিন্তু ছেলের পরিরবার বিষয়টি মেনে না নেওয়ায় আদালতের আশ্রয় নিতে মেয়ের বাবাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বুধবার (২৫ নভেম্বর) বিকালে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেহরিন পুত্রবধুর দাবি নিয়ে শ্বশুরবাড়ির উঠানেই অবস্থান করছেন বলে জানাগেছে।
মেহরিনের বাবা রবিউল ইসলাম বলেন,খাইরুল সরকারি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তার মেয়ের সাথে সম্পর্ক হয়। তারপর গোপনে তারা বিয়ে করে কিন্তু ছেলের বাবা তাদের মেনে নিচ্ছে না।
বুধবার বিকাল পর্যন্ত গ্রামের মেম্বর ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ অনেকেই মীমাংশার উদ্যোগ নেন কিন্তু কোন ফল হয়নি। তাই আজ রাতও মেহরিনকে ওই বাড়ির উঠানেই কাটাতে হবে !
ঘটনাটি শুনে উর্ধতন এক কর্মকর্তা রসিকতা করে বললেন,দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিলেই তো ঝামেলা চুকে যায়। আমরাও মিষ্টি খেতে পারি।
এ ব্যাপারে সরকারি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম এর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি হেসে বিষয়টি এড়িয়ে যান।।