নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, “খেলবেন আপনারা, আমরা রেফারি। প্রকৃত অর্থে নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকায় থাকতে চাই। তবে সহযোগিতা না পেলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।”
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের শুরুতে সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন সিইসি। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে আগাম পোস্টার সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশন এখন একাধিক বাড়তি দায়িত্ব সামলাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট গ্রহণ, সরকারি কর্মকর্তা ও কারা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের ভোটের ব্যবস্থা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নেওয়া। “এই সবকিছুই এক ধরনের অতিরিক্ত চাপ। এর মধ্যেও আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে হবে,” বলেন তিনি।
নাসির উদ্দিন বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া রেফারির কাজ করা কঠিন। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, জাতির কাছে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চাই। এজন্য সবার সহায়তা প্রয়োজন।” তিনি আরও জানান, এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারে ছেয়ে গেছে, অথচ নির্বাচন কমিশন পোস্টার নিষিদ্ধ করেছে। “যারা পোস্টার লাগিয়েছেন, দয়া করে নিজেরাই সরিয়ে ফেলুন। এটি হবে ভদ্র আচরণ। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সংলাপের প্রেক্ষাপটে সিইসি বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং বিভিন্ন দলের আলোচনার কারণে ইসি সংলাপের আয়োজন কিছুটা পিছিয়ে গেছে। “একই দলের সঙ্গে দুইভাবে আলোচনা শুরু হলে ভুল বার্তা যেত, তাই আমরা অপেক্ষা করেছি,” যোগ করেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “ইসির কাছে নিবন্ধিত সব দলই সমান। বড় বা ছোট কোনো দল নয়, সবার মতামত আমাদের কাছে মূল্যবান। আমরা পরামর্শগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্রহণ করব।”
আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “আচরণবিধি প্রকাশ হয়েছে, এখন থেকেই সেটি মেনে চলতে হবে। যে দল তা মানবে না, তাদের নিয়ত সাফ নয় বলে মনে করব। ব্যত্যয় ঘটলে আমরা কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেব।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই-নির্ভর ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিকর প্রচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিইসি বলেন, “এটি এখন এক ধরনের মুসিবত। আগে এমন ছিল না। এখন আমাদের একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার সকাল ও বিকালে দুই দফায় সংলাপে অংশ নেয় ১২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। ইসির আলোচ্যসূচিতে ছিল আচরণবিধি প্রতিপালন, এআই অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক প্রচারে ধর্মীয় উপাসনালয়ের ব্যবহার না করা।
সূত্র: এফএনএস।