পাবনা-৩ (ভাঙ্গুড়া,চাটমোহর,ফরিদপুর)আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির এক বহিরাগত প্রার্থীর প্রচারণায় স্থানীয় জাতীয়তাবাদী দল পাঁচ খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছে । এ অবস্থা দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে শক্তিশালী বিএনপি সবচেয়ে দুর্বল রাজনীতিতে পরিণত হবে – এমন আলোচনা এখন সব মহলে।
এর কারণ অনুসন্ধানে সরেজমিন জানা যায়, আওয়ামী শাসনামলে একের পর এক মিথ্যা মামলা-হামলা ও গণগ্রেফতারের কারণে বিএনপি’র নেতা কর্মীরা এক প্রকার নীরব হয়ে পড়েছিলেন। স্থানীয়ভাবে মিছিল-মিটিং করার স্বক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলেছিল। ২০২২ সালে পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর এড,মাকসুদুর রহমান মাসুদ খন্দকার ভাঙ্গুড়ায় তার নিজ বাসায় নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময়ের চেষ্টা করলে পুলিশ তা ভন্ডুল করে দেয়। উপজেলার অষ্টমণিষা বাজারে পথসভায় স্থানীয় নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি ভ্যানগাড়িতে উঠে বক্তব্য দেওয়ার সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বিপ্লবের নেতৃত্বে গুন্ডাবাহিনী তাকে টেনে-হেঁচড়ে নামিয়ে বিতাড়িত করেন। চাটমোহর,ফরিদপুরেও এরকম অসংখ্য প্রতিরোধের মধ্যে মাসুদ খন্দকার বিএনপিকে তৃণমুল পর্যায়ে সুসংগঠিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। অবশেষে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর তিন উপজেলার স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ সুসংগঠিত হতে দলের উপজেলা ও পৌর কমিটি প্রদানের আহবান জানান।
তিন উপজেলায় পৌর ও দুটি উপজেলার আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়। এ নিয়ে অভ্যন্তরিন মতবিরোধ থাকলেও ওয়ার্ড ও গ্রামের তুণমুল নেতা-কর্মীদের নিয়ে একের পর এক জনসভা করায় পাবনা-৩ এ বিএনপি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। বড় বড় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্থানীয় কমিটি ও বিএনপির মুল ও অংঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। গ্রামে গ্রামে বিএনপির কর্মীরা দারুণভাবে উৎসাহিত হয়। এই আসনটি বিএনপির তা নিশ্চিত হয়ে পড়ে।
সাধারণ আলোচনায় বিএনপির ক্রান্তিকালীন সংগঠক হিসাবে পাবনা-৩ এ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট মাসুদ খন্দকার,জাতীয়তাবাদী দলের এক বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী। বিএনপির সাবেক এমপি কে. এম আনোয়ারুল ইসলাম ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপির হাসানুল হক হীরা, তারাও এলাকায় সমধিক পরিচিত মুখ। জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের হাসানুল হক রাজা প্রচার প্রচারণায় রয়েছেন। এত সবের মধ্যে এলাকায় সম্পূর্ণ অপরিচিত মুখ,পাবনার সুজানগর উপজেলার স্থানীয় রাজনীতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনকে যখন পাবনা-৩ এ ধানের শীষে প্রার্থী করার কথা বলা হয় তখনই বাধে বিপত্তি।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. আব্দুস সালাম ভাঙ্গুড়া উপজেলায় দলের জনসভা আহবান করেন এবং সেখানে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে তুহিনকে তারেক রহমানের প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা করেন এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিবকে দিয়ে তারেক রহমানের পক্ষে তুহিনের সাথে কাজ করার জন্য আহবান জানানো হয়।
পরবর্তী সময়ে মাসুদ খন্দকার দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড ছাড়া নির্বাচনী জনসভা থেকে বিরত থাকেন। তবে কে এম আনোয়ারুল ইসলাম,হাসানুল হক হীরা,হাসানুল হক রাজা, তারা প্রত্যেকে মাঠে নিজের সমর্থনে গণসংযোগ, প্রচার প্রচারণা ও জনসভা অব্যাহত রেখেছেন। কে এম আনোয়ারুল ইসলাম সম্প্রতি তিনটি উপজেলায় জনসভা করেছেন।
কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ইতোমধ্যে তারেক রহমানের সাথে ছবি সংযুক্ত করে এলাকায় ব্যাপক পোস্টার লাগিয়েছেন। তিনিও তিনটি উপজেলা, এমনকি ইউনিয়নে জনসভা করছেন। তবে লক্ষণীয় যে, মাসুদ খন্দকারের সমর্থক গোষ্ঠীর একটা অংশই কেবল তার সঙ্গে রয়েছেন। কারণ জনসভায় সালাম সাহেব মাসুদ খন্দকারকেই কেবল তুহিনকে সহযোগীতার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এজন্য অন্যরা কেউ তার এই নির্দেশ ফলো করছেনও না। এদিকে সাংগঠনিক কাজে মাসুদ খন্দকার এলাকায় এলে শত শত সমর্থক কর্মী ব্যাপক শো-ডাউনের মাধ্যমে তাকে রিসিভ করায় হাসান জাফির তুহিন শংকিত হয়ে পড়েন। এখান থেকেই শুরু হয় ঈর্ষা। তখন মাসুদ খন্দকারকে বাদ রেখে তিনি নানা কর্মসূচী দিতে থাকেন। এতে মাসুদ খন্দকারের অনুসারীদের মধ্যেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। অবস্থার বেগতিক দেখে মাসুদ খন্দকার আর এখন তুহিনের সাথেও যাচ্ছেন না।
এদিকে গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থীদের সবুজ সংকেত কিংবা মনোনয়নের ব্যাপারে কাউকে কোনো প্রকার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি মর্মে বার্তা দেওয়ার পর বিএনপির গ্রুফগুলো আরো শক্তি ফিরে পেয়েছে- এজন্য যে, বাহির থেকে চাপানো তুহিন সাহেব কি তাহলে অপপ্রচার করছেন !
এসব কারণে পাবনা -৩ এলাকার মাঠে নিজের প্রার্থী মনোনয়ন পেতে বিএনপি পাঁচটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তা এখন স্পষ্ট। স্থানীয়রা বহিরাগত নয়,স্থানীয়দের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন চান। বহিরাগত প্রার্থী হেঠাও এমন সংগঠনও চাটমোহরে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এলাকার বিএনপির নেতা-কর্মীরাও রীতিমত হতাশ। তারাও বিভক্তির বেড়াজালে আটকে বিভক্ত হয়েই মাঠে রয়েছেন। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে সহ্য করতে পারছেন না। নেতাকর্মীদের বক্তব্যেই এসব সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রার্থী ছাড়া বিএনপির মধ্যে এই বিভক্তি দূর করা সম্ভব নয় বলে সর্বত্র প্রতীয়মান।
এদিকে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর থেকে জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের একক মনোনীত প্রার্থী হিসাবে মাওলানা আলী আজগর সক্রীয়ভাবে মাঠে রয়েছেন। সবখানে ঐক্যবদ্ধভাবেই তারা কাজ করছেন। অনেক স্থান থেকেই এখন খবর আসছে স্থানীয় বিএনপি বিভক্তির কারণে প্রতিদিন ভোটাররা জামাতে ভীড়ছেন। জামাতের নেতাকর্মীরাও তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে নেওয়ার জন্য একাট্টা হয়ে মাঠে গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন ।।