পাবনা জেলার সদর উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী ফসলি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কাটার অভিযোগে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত আটককৃতদের তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। এসময় ৮টি ট্রাক এবং ৪টি স্কেভেটর মেশিন জব্দ করা হয়।
গতকাল রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চরঘোষপুর অঞ্চলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুরাদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন, পাবনা সদরের কৃষ্টপুর গ্রামের কালু প্রামাণিকের পুত্র জুয়েল (৪০), হেরাজ প্রামাণিকের পুত্র হৃদয় (২৮), চর চরভাঙ্গা বাড়িয়ার রাসেল বিশ্বাসের পুত্র মারুফ (৪০), বধেরহাটের সাদেক মণ্ডলের পুত্র বাবু মণ্ডল (৪০), লাইব্রেরি বাজারের আব্বাস উদ্দিনের পুত্র বাপ্পি (৩২), চরঘোষপুরের মুক্তার মণ্ডলের পুত্র হযরত আলী (২৯), বাংলাবাজারের মৃত আকবর আলী পুত্র মক্কার প্রামাণিক (৬২), মৃত রোস্তম আলীর পুত্র রবিউল ইসলাম (৪৩), গাছপাড়ার জাহের আলীর পুত্র জমির হোসেন (৩৫), চক ছাতিয়ানির মৃত নূর হোসেনের পুত্র সাহাবুল ইসলাম (৪২), চাটমোহরের মৃত নুরুজ্জামানের পুত্র নাহিদ পারভেজ (৩৫), পাবনা শহরের আটুয়া গ্রামের মৃত মানিক হোসেনের পুত্র সাব্বির হোসেন (২৮), কাচারীপাড়ার সিদ্দিক মণ্ডলের পুত্র পান্না (৩২) এবং বাংলাবাজারের সোহরাব প্রামাণিকের পুত্র সাইফুল (৩৫)।
জানা যায়, জেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ফসলি জমিতে ব্যাপকভাবে সবজির আবাদ ও অধিক ফলন হয়। এ এলাকার কৃষকরা সারাদেশে সবজির চাহিদা মিটিয়ে থাকে। সেখানে কৃষকের ফসলি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নেওয়ার শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর তথ্যের ভিত্তিতে গতরাত ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পাবনা সদর উপজেলাধীন চরঘোষপুরে অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে ৮টি ট্রাক, ৪টি স্কেভেটর মেশিন জব্দ এবং জড়িত ১৪ জনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় সেনাবাহিনী, এনএসআই-এর সহকারী পরিচালক, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আদালত আটককৃতদের তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এই অঞ্চলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে ফসলি জমি থেকে মাটি ও বালু কাটা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছিলো। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয় নি। প্রশাসনের লোকজন এলাকায় এসে এসব অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করে চলে যায়। আবার প্রশাসন মাঝেমধ্যে এসে এদের আটকও করে। কিন্তু দু’একদিনের মধ্যে জেল থেকে বের হয়ে এসে আবারও মাটি কাটা শুরু করে। ফসলি জমি থেকে বালু ও মাটি কাটা চক্রের সাথে প্রশাসন ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় মাঝে মধ্যে দায়সারা অভিযান চালানো হয় বলে তারা মনে করেন। ফসলি জমি থেকে বালু ও মাটি কাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবি জানান এলাকাবাসী।
পাবনা সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুরাদ হোসেন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারী চরঘোষপুরে পদ্মা নদী ও তার তীরবর্তী জমিতে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করে আসছিল। যার ফলে উক্ত এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়াসহ রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং আশেপাশের আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মাটিকাটা ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান করে ১৪ জনকে আটক করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অবৈধ বালু ও মাটি কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
সূত্র: বাসস