করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। এরই মধ্যে ২১ হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের আট শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পাইলিং প্রযুক্তির পরিবর্তনে সাশ্রয় হওয়া ৭০০ কোটি টাকায় ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে পাইলিং কাজের ৪৭ ভাগ ও মূল প্রকল্পের ৮ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রকল্পে স্ক্রুড স্টিল পাইলিংয়ের পরিবর্তে বোরড পাইলিং করা হচ্ছে। মেট্রোরেলের মাটি পরীক্ষায় স্ক্রুড স্টিল পাইলিংকে অনুপযুক্ত বলা হয়েছে। এখানকার মাটি একই রকম হওয়ায় পাইলিংয়ের ধরনে পরিবর্তন করা হয়েছে।
এতে আমাদের ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এই টাকা থেকে দ্বিতীয় ধাপে থাকা ভিভিআইপি টার্মিনাল প্রথম পর্যায়েই নির্মাণ করা সম্ভব হবে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে বর্তমান ভিভিআইপি টার্মিনাল ভবন ভাঙা পড়বে। তাই জাইকার আপত্তি না থাকলে এই সংযোজন সম্ভব হবে। টার্মিনালের দুই পাশের বর্ধিত অংশও নির্মাণ করা হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনাকালেও থেমে নেই আমাদের কাজ। প্রকল্পের মোট তিন হাজার পাইলিংয়ের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৪৭ শতাংশ শেষ। নভেম্বরের মধ্যে পাইলিংয়ের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত মূল কাজের ৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ৯০০ শ্রমিক প্রকল্পের ভিতরে থেকে কাজ করছে। আরও আড়াই হাজার শ্রমিকের আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে। প্রতিদিন ১০০ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আক্রান্তদের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এভাবেই করোনা মোকাবিলা করে এই মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ’ প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাটি কাটার কাজ শেষ হয়েছে। বর্ষার পানিতে মাটি বসিয়ে সমান করা হয়েছে। বলাকা ভবনের দক্ষিণ পাশে এখন চলছে পাইলিংয়ের কাজ।
দূরত্ব বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। চারদিকে মেশিনের শব্দে কর্মযজ্ঞের বার্তা দিচ্ছে। কর্মরত শ্রমিক হাসান আলী বলেন, আমরা দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছি। নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় সামগ্রীই দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত করোনা টেস্ট হয়। আক্রান্ত হলে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ২৮ ডিসেম্বর শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২ লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটার জমির ওপর নির্মিত হবে এই থার্ড টার্মিনাল। কারিগরি মূল্যায়ন, আর্থিক মূল্যায়ন শেষে প্রকল্পের কাজ পেয়েছে মিৎসুবিশি, ফুজিতা ও স্যামসাং কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)। এই প্রকল্প ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীর পর প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার এবং ঋণ হিসেবে জাপানের সংস্থা জাইকা দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
থার্ড টার্মিনালের রানওয়ে হিসেবে ব্যবহার করা হবে মূল টার্মিনালের বর্তমান রানওয়ে; যা পরে সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব রয়েছে। থার্ড টার্মিনালের নকশায় রাখা হয়েছে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ। এর মধ্যে ১২টি প্রথম ধাপে নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে। বাকিগুলো পরে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্মাণ করা হবে। বোর্ডিং ব্রিজের সঙ্গে থাকবে ১৩টি চেক ইন বেল্ট। পর্যাপ্ত সংখ্যক এক্সেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হবে। থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কারপার্ক। তিনতলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যরীতিতে আনা হয়েছে অনন্য নান্দনিকতা। টার্মিনাল ভবনের বহির্বিভাগে থাকবে চোখ ধাঁধানো নকশা।