বরকতময় রমজানের পরপরই আগমন ঘটে শাওয়াল মাসের। আরবি বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে দশম মাস ‘শাওয়াল’। শাওয়াল আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ উঁচু, উন্নত বা ভারী হওয়া ইত্যাদি। রমজান মাসে আল্লাহর অগণিত রহমতের কারণে পৃথিবীতে শান্তির বার্তা প্রবহমান থাকে। মানুষ নিজেকে সব ধরনের পাপকাজ থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে।
এজন্য রমজান মাসকে জীবনের মোড় পরিবর্তনকারী মাসও বলা হয়। কিন্তু রমজান মাস বিদায়ের সঙ্গে আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ি। জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমাদের আমলেরও কমতি চলে আসে। ফলে আমরা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ি। কিন্তু একজন মুমিন কখনো আল্লাহর রহমতের পথ থেকে দূরে যায় না। মুমিনের জীবনে রহমতের মাস রমজানের শান্তির বার্তা সারা বছর বর্ষিত হয়। এ জন্য রমজান মাস বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে একজন মুমিনের করণীয়গুলো জেনে নেওয়া আব্যশক।
রমজান মাসে সিয়াম সাধনার প্রধান উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা। তাকওয়া অর্থ আল্লাহভীতি। অর্থাৎ মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মেনে চলা। আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) যেভাবে জীবনযাপন করার করার নির্দেশ দিয়েছেন, তা মান্য করা। আল্লাহর শাস্তির ভয়ে নিজেকে সব ধরনের পাপকাজ থেকে বিরত রাখা। তাই একজন মুমিন রমজান মাসে আল্লাহকে যেভাবে ভয় করে রমজানের পরবর্তী মাসগুলো অনুরূপ ভয় করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ প্রশস্ত করে দেন এবং তাকে ধারণাতীত উৎস থেকে দান করেন জীবিকা।’ (সুরা তালাক : ২-৩)
রমজান মাসে মুমিনের ইবাদতের বসন্তকাল। এ মাসে সারা দিন সিয়াম সাধনার পাশাপাশি তারাবি, তিলাওয়াত, তওবা ও ইস্তিগফারসহ নানা ইবাদতে মগ্ন থাকে। কিন্তু রমজান মাসের পর আমরা দুনিয়ায় কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এ জন্য রমজান মাসের মতো নফল ইবাদত বেশি বেশি করতে হবে। কারণ নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এ ছাড়া রমজান মাসে আমরা দান-সদকা বেশি করে থাকি। জাকাত প্রদান, সদকাতুল ফিতর আদায়সহ গরিব-দুস্থদের সাহায্য রমজানের পরবর্তী মাসগুলোয় করতে হবে।
তাই আমাদের ভালো কাজ করা ও মন্দ কাজ পরিহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পাপ থেকে নিজেকে রক্ষার করার দোয়া সব সময় করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ কোরো না এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের করুণা দাও। নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা।’ (সুরা আলে ইমরান : ৮) অর্থাৎ রমজান মাসের মতো আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসের ছয় রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.) একাধিক হাদিসে শাওয়াল মাসের ছয় রোজার বরকত ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন। আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন বছরজুড়ে রোজা রাখল।’ (মুসলিম : ২৮১৫)
অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক দিন রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! (সা.) আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে, কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখো, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি : ১৫৩৪)
আমাদের দেশে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা মানে অনেকে মনে করে মহিলাদের রোজা। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। শাওয়াল মাসের রোজা পুরুষ-নারী সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া রাসুল (সা.) চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন। সর্বোপরি আল্লাহতায়ালা আমাদের রমজান মাসের ইবাদতের ধারা সারাবছর অব্যাহত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্র: আমার দেশ ।