বিশেষ প্রতিনিধি: পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদের শহীদ মিনার অযত্নে অবহেলায় পড়ে ছিল ১৭টি বছর ! কারণ এই মাঠে সরকারি উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণে তৎকালিন আওয়ামীলীগ নেতাদের নাকি সম্মতি ছিলনা। ফলে পুর্বতন ইউএনওগণ এখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতি মনোযোগ দিতে পারেননি। আওয়ামীলীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সাবেক এমপি মো. মকবুল হোসেন ভাঙ্গুড়া বাসস্ট্যান্ডের নিকট রেল লাইনের ধারে ঝুঁকিপূর্ণ একটি জায়গায় শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। তখন তিনি এটাকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘোষনা করায় উপজেলা প্রশাসনসহ সবাই সেখানেই শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বাধ্য হতেন। এভাবে ১৭ বছর গড়ায়। ইউএনও’র বাংলোর দক্ষিণে এবং উপজেলা ভুমি অফিসের সামনে উপজেলা পরিষদের এই শহীদ মিনারটি কেউ সংস্কার করতেও সাহস পাননি। দীর্ঘদিন অযত্নে স্যাঁত স্যাঁতে হয়ে পড়ে,রং বিবর্ন হয়। কোথাও কোথাও ভেঙ্গে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। শহীদ মিনারে সরাসরি প্রবেশের রাস্তাও ছিলনা,জঙ্গলে ছিল ভরপুর। তবও দুর্ভাগ্য হলেও সত্য এই শহীদ মিনারে সরকারের কেউ ফুল দিতে যাননি,যেতে হতো দূরের কথিত ঐ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। অথচ তৎকালিন ইউএনও মো. মিজানুর রহমান সরকারি কর্মসূচী পালনের সুবিধার্থে পরিষদ মাঠে এই শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেছিলেন।
অতপর আগস্ট বিপ্লব ! অন্তবর্তীকালিন সরকার ক্ষমতায় এলেন। আওয়ামী কালো ছায়া সরে গেল। ইউএনও হিসাবে দায়িত্ব পেলেন মোছা. নাজমুন নাহার। তাঁর চোখে পড়লো এই শহীদ মিনার। এখানে রয়েছে একটি শিশু পার্ক,নির্ঝরিণী নামে একটি ক্ষুদে রাইব্রেরি ও পুকুর। পুকুরের চারপাশে রয়েছে ওয়াক ওয়ে । ইউএনও নাজমুন নাহার সৌন্দর্য বর্ধনে মনোযোগ দিলেন। পার্কের মাঠে নব উদ্যোমে ঘাস লাগালেন,বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ বৃক্ষ,ফুলের বাগান তৈরিসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনেন। দর্শকদের বসার আসন নির্মাণ ও রং করার ব্যবস্থা করলেন।
তিনি শহীদ মিনারের চারপাশে জঙ্গল পরিস্কার করে সামনে মুল ফটক নির্মাণসহ ওয়াক ওয়ে উন্মুক্ত করলেন। বেদিতে সাটালেন টাইলস। লাল রং এ রক্ত বর্ণে জেগে উঠলো এই শহীদ মিনার। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উদযাপনে নিলেন নতুন নতুন পদক্ষেপ। শহীদ মিনারের পাদদশে চিত্রকর্মের মত আলপনা ও বর্ণ লেখার কাজ করলেন। এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী নেমে গেলেন সেই আলপনার কাজে। এ এক নতুন উদ্যোম !
সহকারী কমিশনার (ভুমি) তাসমীয়া আক্তার রোজীকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনও নিজে ধরলেন তুলি ! এভাবেই শুরু হলো “ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি” এমন ভাবনার প্রতিচ্চবি,আলপনা ও বর্ণ লিখন। এখন শহীদ মিনারটি সেজে উঠেছে নতুন সাজে। আজ রাত ১২টা ১মিনিটে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভরে উঠবে শহীদ মিনার,সহস্র মানুষের পূষ্পার্ঘ দিয়ে। ১৭ বছর পর আজ সরকরি ভাবে এই শহীদ মিনারে সবাই শ্রদ্ধা জানানোর অপেক্ষায়। ইউএনও নাজমুন নাহারের এই মহৎ কর্মটি সবার কাছে উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে -এমনই প্রত্যাশা সবার।