বিশেষ প্রতিনিধি,ভাঙ্গুড়া(পাবনা) :
পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেছেন,মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ মুজিব পাকিস্তানে পালিয়ে গেলেও কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন দেশ প্রেমিক জিয়াউর রহমান। এরপর সেক্টর কমান্ডার হিসাবে নেতৃত্বও তিনি দেন। তিনি সম্মুখ যুদ্ধে লড়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আবার সেই প্রেক্ষাপটে জুলাইয়ে ছাত্রজনতার গণআন্দোলনে মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন ভারতে। উনারা পালাতেই অভ্যস্ত অভ্যস্ত ! খালেদা জিয়া পালান না,জীবন মরন সন্ধীক্ষণে থেকেও সুখে-দু:খে দেশের মানুষের সাথে রয়েছেন। মানুষের মুক্তির জন্য লড়ছেন।
১৯৭৫ সালে দেশের ক্রান্তিকালে বাকশাল নামের স্বৈরশাসনের অবসানে ৭ নভেম্বর বন্দিদশা থেকে বীর সেনানি জিয়াউর রহমানকে সিপাহী-জনতা মুক্ত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেন। সেটা ছিল জাতির এক ঐতিহাসিক মূহুর্ত । পরে দেশ যখন শস্য-শ্যামলায় ভরপুর,মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করছিল এমন সময় ভবারতীয় চক্রান্তে জিয়াউর রহমান শহীদ হন।
পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির শাসনামল স্বর্ণ যুগে পরিণত হয়। ওয়ানইলেভেনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে আওয়ামীলীগ শেখ হাসিনার নেতেৃত্বে সরকার গঠন করে আবার শুরু করে নির্যাতন নিষ্পেশন। বিএনপির এমন কোনো কর্মী নেই যারা হয়রানি মামলার শিকার হননি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ভূয়া মামলা দায়ের করা হয় এবং নির্যাতন-নিপিড়ন করে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়। এতে কি লাভ হয়েছে ? শেখ হাসিনা তার পিতার পদাংক অনুসরণ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলো এবং দেশের মানুষ নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ পেল। জিয়া,বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়া দেশের সম্পদ। তারা দেশের কল্যাণে এখনো লড়ছেন।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ৭ নভেম্বর উপলক্ষ্যে শুক্রবার পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে বিশাল আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে সরকারি হাজি জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট মাসুদ খন্দকার এসব কথা বলেন।
ভাঙ্গুড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুর মুজাহিদ স্বপন এর সভাপতিত্বে ভাঙ্গুড়ায় সরকারি হাজী জামাল উদ্দিন কলেজ মাঠের জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ,সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক জাফর ইকবাল হিরোক,সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নুরুল ইসলাম বরাত,পৌর বিএনপির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম,সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম বুরুজ,উপজেলা যুবদলের আহবায়ক ফরিদুল ইসলাম,যুবদল নেতা আলতাব হোসেন,শাহিনুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের হুমায়ুন কবির,ইউসুফ আহমেদ,মাসুম সরকার,ছাত্রদলের আহবায়ক হুমায়ুন আহমেদ মুন,সদস্য সচিব লিখন সরকার প্রমুখ।
জনসভায় চাটমোহর উপজেলা ও পৌর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,এসএম জাকারিয়া,অধ্যক্ষ মাহমুদ,সেলিম রেজা,সাইদুর রহমান,জাহাঙ্গীর হোসেন,মোমতাজ আলী,আশরাফুল ইসলাম,,মনির উদ্দিন,গোলজার হোসেন,শাহজাহান আলী,মোজাম্মেল হক,সাদেকুর রহমান,আব্দুল মোমিন,ফজলুল হক,যুব নেতা কালাম,সওকত আকবর,আলিম,ইসলাম,নয়ন,নুরু,মামুন,মানিক হোসেন,বাবলু মেম্বর ও বাবু।
এর আগে ভাঙ্গুড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর অংশ গ্রহনে একটি বিশাল আনন্দ শোভাযাত্রা উপজেলা শহর শরৎনগর ও ভাঙ্গুড়া বাজার প্রদক্ষিণ করে।
এড.মাসুদ খন্দকার তার বক্তব্যে বলেন,পাবনা-৩ আসন বিএনপির ঘাঁটি কিন্তু বিনা ভোটে আওয়ামীলীগ মকবুল হোসেনকে এমপি বানিয়ে পরিবারতান্ত্রিক রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিগত ১৭ বছর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য পরিণত হয়েছিল এই এলাকা। এখন আর এলাকায় তারা নাকি আসতে পারছেন না ! তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,আগে আপনাদের বিচার হবে,তারপর এলাকার মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েন। তবে ভবিষ্যতে এসব দেশ বিরোধী কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জাতীয়তাবাদি শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
মাসুদ খন্দকার আরো বলেন,আওয়ামীলীগ এমন উন্নয়ন করেছে যে উপজেলা সদরের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটা ব্রিজ আজ পর্যন্ত করতে পারেনি। তিনি বলেন,আগামীতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও দেশ নায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি যদি সরকার গঠন করতে পারে এবং মহান আল্লাহপাক তাকে যদি কাজ করার সুযোগ দেন তাহলে তিনি সর্বপ্রথম ভাঙ্গুড়া বড়াল সেতুর ওপর থেকে বেইলিব্রিজ উৎপাটন করে ঢালাই প্রশস্ত ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিবেন।
** ৭ নভেম্বর, ১৯৭৫ সালে কি ঘটেছিল ?
এই দিনে সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবে দেশের তৎকালীন রাজনীতির গতিধারা পাল্টে গিয়েছিল। দেশ ও জাতি পেয়েছিল নতুন দিশা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনার ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ তার অনুসারী সেনা সদস্যদের নিয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেন। নিজেকে সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ৬ নভেম্বর বঙ্গভবনে গিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করে করে মন্ত্রিসভা বাতিল ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন খালেদ। প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে দেশের প্রেসিডেন্টের পদে বসান। ওই রাতেই সেনাবাহিনীর সাধারণ সিপাহিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
সেই অভ্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়ে সর্বস্তরের জনতা রাজপথে নেমে আসে। সিপাহি-জনতার মিলিত সেই বিপ্লবে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান। পাল্টা অভ্যুত্থান ঠেকাতে গিয়ে ৭ নভেম্বর সকালে কয়েকজন অনুসারীসহ প্রাণ হারান খালেদ মোশাররফ। অভূতপূর্ব এক সংহতির নজির সৃষ্টি হয় দেশের রাজনীতিতে। জিয়া চলে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পটপরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রভাবমুক্ত হয়ে শক্তিশালী সত্তা লাভ করে। গণতন্ত্র অর্গলমুক্ত হয়ে অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়, এই দিন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়।
এর পর থেকে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিএনপি সরকারের আমলে এ দিনটিতে ছিল সরকারি ছুটি। তবে আওয়ামী লীগের দেড় যুগের শাসনামলে গত দেড় দশকেরও বেশি সময় দিবসটি স্বাচ্ছন্দ্যে উদযাপন করতে পারেনি বিএনপি।
তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এ বছর দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। ঘোষণা করা হয়েছে ১০ দিনের কর্মসূচি। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতিহা পাঠ অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার দিবসটি উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীতে নেওয়া হয়েছে বিশাল র্যালির প্রস্তুতি।
দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ৭ নভেম্বরের চেতনায় সব জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের পথচলাকে অবারিত এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি।
পৃথক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেই একই চেতনা বুকে ধারণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিত করা, স্বাধীনতার সুফল তথা অর্থনৈতিক মুক্তি, শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।