শুভশ্রী রায় : পাবনার ভাঙ্গুড়া হাজী জামাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মাহবুব-উল-আলম বাবলু কে বর্ণাঢ্য বিদায় সংবর্ধনা জানালো রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ। এ উপলক্ষ্যে বুধবার (২২ মার্চ,২০২৩) কলেজের স্মার্ট বিল্ডিং এর ৪র্থ তলার হলরুমে আয়োজন করা হয় তার অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও অনার্স শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই সংবর্ধনার আয়োজন করেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রতাপ কুমার মন্ডল। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজের সভাপতি মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান,ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল ,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: সাইফুল আলম,অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: জাহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। কলেজের সকল স্যার-ম্যাডাম ও স্টাফ এই বিদায় সংবর্ধনায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, জনাব মাহবুব-উল-আলম বাবলু সকলের কাছে একজন প্রিয় মুখ হিসাবে যেমন পরিচিত তেমনি শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেও ছিলেন অত্যধিক জনপ্রিয়। এ কারণেই অনুষ্ঠানটি ছিল একটু ব্যতিক্রম। এই আয়োজনের ‘সাজ-সজ্জা’ অনুষ্ঠানটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। প্রিয় শিক্ষকের সম্মানে চার তলার মুল ফটকের প্রবেশ দ্বারে রঙিন বেলুনের সুদর্শন একটি গেট তৈরি করা হয়। সংবর্ধনা মঞ্চটি করা হয় ফুল দ্বারা সুসজ্জিত। ব্যানারে লেখা হয় ‘বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সফল সমাপ্তিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো: মাহবুব-উল-আলম’ এর বিদায় সংবর্ধনা। এর মাধ্যমে ঐ শিক্ষকের মর্যাদার স্বীকৃতি ও সম্মুন্নত করা হয়। সম্মুখ ভাগে শিক্ষকদের আসন বিন্যাসেও পরিলক্ষিত হয় অনন্য সম্মাননার নিদর্শন। শিক্ষকদের জন্য রঙিন বেলভেট কাপড়ে মোড়ানো প্রতিটি আসন বিন্যাস করা হয়- যেন “শিক্ষক তাঁরা শ্রেষ্ঠ সবার”- এটারই বহি:প্রকাশ।
সম্মানিত শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনায় বক্তাদের বক্তব্যেও উঠে আসে তার জীবনাদর্শনের গুণ-কীর্তন। একাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী মো: রহিমা খাতুন ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী খুশি কর্মকার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্রী জুলিয়া তাদের বক্তব্যে বলেন,“উৎকৃষ্টমানের একজন শিক্ষক ছিলেন বাবলু স্যার। তেমনি আদর্শ মানুষ হবার জন্য ন্যায়-নীতি,শুদ্ধাচার-শিষ্টাচার ও বাস্তবধর্মী জীবন গড়ার যে দীক্ষা- তার অনেকটাই শেখা হলো তাঁর কাছ থেকে।
হাজী জামাল উদ্দিন কলেজের সিনিয়র শিক্ষক প্রভাষক আহসানুল হাবীব রতন,প্রভাষক দুলাল হোসেন,প্রভাষক রফিকুল ইসলাম টিপু,প্রভাষক মো: শাহআলম,প্রভাষক রবিউল করিম,প্রভাষক মোহাম্মদ সোহায়েল প্রত্যেকেই তাদের বক্তব্যে বলেন,“বাবলু স্যার ছিলেন আমাদের একজন প্রিয় অভিভাবক। ব্যক্তি জীবনে তিনি সদালাপি ও অনেক ধৈর্য্যশীল একজন মানুষ। অবসর জনিত কারণে তার সদা হাস্যোজ্জল মুখ ও অভিভাবকত্বে আমাদেরকে এক ধরনের শূণ্যতায় পতিত করবে। আমরা তাঁকে খুব মিস করবো”।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: সাইফুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন,বাবলু প্রফেসর ছিলেন একজন ক্লাসমুখী ও দায়িত্বশীল মানুষ। সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠা মানুষ হিসাবে কলেজে তার সুখ্যাতি রয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তাঁর কারণেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান(সম্মান)বিভাগ ব্যাপক পরিচিতি পায়। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যার দিক থেকেও বিভাগটি বরাবরই জাকজমকপূর্ণ।
ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল বলেন,প্রফেসর বাবলু শিক্ষক হিসাবে যেমন সুখ্যাতি পেয়েছেন তেমনি সকল লেভেলের মানুষের কাছেও তার ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। এখন অবসরের কারণে একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসাবে সমাজের মানুষের জন্য তাঁর অনেক বেশি ইতিবাচক ভুমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হলো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন,মাহবুব উল আলম বাবলু সাহেব কে প্রথম চিনলাম প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসাবে। তারপর জানলাম তিনি একজন কলেজ শিক্ষক। সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠায় তিনি একজন অসাধারণ মানুষ। তিনি বলেন,রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষার্থীদের এক ভাইভায় এসে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। তখন থেকে ঐ বিভাগ ও বাবলু সাহেবের প্রতি আমার খুব ভালো ধারণা জন্মে। প্রেসক্লাবের সভাপতি ও একজন সাংবাদিক হিসাবে তাঁর আচরণ এবং সহযোগিতা বরাবরই ইতিবাচক।
বিদায়ী শিক্ষক মাহবুব-উল-আলম বাবলু বলেন, “দীর্ঘদিন শিক্ষকতা পেশায় থেকে যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আজ বিদায় লগ্নে তার মূল্যায়ন করবেন তারাই, যারা কলেজে রইলেন এবং যারা সেবার জন্য এখান থেকে বের হয়ে গেছেন। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ আমার বিদায়লগ্নে সংবর্ধনার আয়োজন করে যেভাবে সম্মানিত করেছে সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই”।
পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অতিথিগণের সাথে বিদায়ী শিক্ষক ফটো সেশনে যোগ দেন এবং সকলের সাথে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন। এর আগে অতিথিবৃন্দ,কলেজের অধ্যক্ষ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক তাঁকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা প্রদান করেন ।