পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পাতানো চাচার সাথে গোপনে বিয়ের পর স্বীকৃতি না পেয়ে সুমিয়ারা আক্তার সুমি (২০) নামে এক কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের ময়দানদীঘি বাজারে। নিহত সুমি একই ইউনিয়নের চকদিগর গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে এবং ভাঙ্গুড়া বিএম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পুলিশ শনিবার (২২ মে) লাশটি ময়না তদন্তের জন্য পাবনা জেলা মর্গে পাঠিয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে পাতানো চাচা ফজলুর রহমান ওরফে ফজেল (৫০) পলাতক রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ বিষবছর পূর্বে আব্দুল কাশেমের সাথে একই ইউনিয়নের পূর্বরামনগর গ্রামের বাসিন্দা ফজেল রহমানের মধ্যে ভাই-ভাই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফজেল ময়দানদীঘি বাজারের ডিসলাইনের ব্যবসায়ী। এরপর ফজেল তার পাতানো ভাই আব্দুল কাশেমের ছোট মেয়ে সুমির পড়াশোনাসহ সকল খবচ বহন করত । সুমি মাঝে মধ্যে তার ফজেল চাচার বাড়িতে বেড়াতে যেত। একপর্যায়ে এদের মধ্যে অসম প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৮ সালে ভাতিজিতুল্য সুমিকে গোপনে পাবনা এক কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করে তিনি। কিন্তু বিয়ের কোনো কাগজপত্র দেয়নি সুমিকে। ফজল দুই সন্তানের জনক ও তার প্রথম স্ত্রী রয়েছে। অবশেষে শুক্রবার(২১ মে)ফজলের দোকানে গিয়ে প্রকাশ্যে গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়ে সুমি। ফজেল অসুস্থ সুমিকে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাবনা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন কিন্তু পথে তার মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে ফজলুর রহমান ওরফে ফজেলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দিয়ে সুইচ অফ করে দেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ বলেন, বলেন আমি গ্রামবাসির মুখে শুনেছি মেয়েটি অন্তঃসত্তা ছিল। তিনি আরো বলেন,ময়নাতদন্ত শেষে আজ শনিবার বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকার মানুষ উদ্বিগ্ন ও বিষন্ন হয়ে পড়ছেন। ফজলের এই ঘৃণিত কাজে সবাই নিন্দা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন,ফজলের অনেক টাকা। তিনি থানা ম্যানেজ করে ফেলেছেন। তাই এতবড় অন্যায় করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। কারণ সুমির মৃত্যুর জন্য ফজলই দায়ী। তিনি একদিকে অনৈতিক কাজ করেছেন অন্যদিকে বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখে অবাধে মেলামেশা করে সুমি কে অন্ত:সত্তা করেছেন। তারপরও তাকে স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি না দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। কেউ কেউ জানান, বিয়ের কথা প্রকাশ করে ফজলের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ঘরে তোলার দাবি জানানোর পর তিনি সুমিকে বিষ খেয়ে মরতে বলেছিলেন। এছাড়া সুমির অনাগত সন্তান জন্ম নিলে কার পরিচয়ে বড় হবে এ প্রশ্ন তার মাথার ঘুরপাক খাচ্ছিল।
এলাকাবাসীর দাবি সুমিকে মৃত্যু প্ররোচনা দেওয়ার জন্য ফজলকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেয়া দরকার।
ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সুমির মরদেহ উদ্ধার করেছে। তিনি আরো বলেন,ফজল এবং সুমি ২০১৮ সালে গোপনে বিয়ে করেন। জনৈক ব্যক্তি তাদের বিয়ের কাবিননামার একটি কপি থানায় পৌঁছে দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ না করায় পুলিশ থানায় একটি ইউডি মামলা রুজু করেছে। তিনি আরো বলেন,ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর কারো বিরুদ্ধে মৃত্যু প্ররোচনা দানের অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।