চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে একচেটিয়া জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। বুধবার (১৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা যায়, ২৬টি পদের মধ্যে ২৪টিতেই জয়ী হয়েছে শিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। এক পদে জয় পেয়েছে ছাত্রদল, আরেকটিতে ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’র প্রার্থী।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অনুষ্ঠিত এই ভোটের মধ্য দিয়ে দেশের তিনটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নেতৃত্ব চলে গেল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের হাতে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে জয় পেয়েছিল সংগঠনটি।
ভোটগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের মিলনায়তনে ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন। তখন শিবিরের নেতাকর্মীরা উল্লাসে মিলনায়তন মুখর করে তোলেন।
ফলাফলে দেখা যায়, ভিপি পদে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ শিবিরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি পেয়েছেন ৭,৯৮৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় পেয়েছেন ৪,৩৭৪ ভোট। জিএস পদে ইতিহাস বিভাগেরই সাঈদ বিন হাবিব ৮,০৩১ ভোটে জয়ী হয়েছেন, যেখানে ছাত্রদলের প্রার্থী মো. শাফায়াত হোসেন পেয়েছেন ২,৭২৪ ভোট।
তবে এজিএস পদে জয় পেয়েছে ছাত্রদল। তাদের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক পেয়েছেন ৭,০১৪ ভোট, শিবিরের সাজ্জাত হোছন মুন্না পেয়েছেন ৫,০৪৫ ভোট। অন্যদিকে সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের তামান্না মাহফুজ স্মৃতি বিজয়ী হয়েছেন।
শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট ২৭ হাজার ৫১৬ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। পাহাড়ঘেরা ক্যাম্পাসে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। পাঁচটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানান, ভোট গণনায় শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেলের সহায়তায় মেশিন ও হাতে গণনা উভয় পদ্ধতিতে ফলাফল যাচাই করা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ “গণতান্ত্রিক চর্চার পুনরারম্ভ” হিসেবে দেখছে। উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার সকালে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, “এটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।”
১৯৯০ সালের পর দীর্ঘ ৩৫ বছর বিরতির পর অনুষ্ঠিত এই চাকসু নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে। যদিও শিবিরের একচেটিয়া জয়ে অন্য প্যানেলগুলো কার্যত প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৮১ সালের পর আবারও চাকসুর নেতৃত্বে ফিরল ইসলামী ছাত্রশিবির। ঐ সময় ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন সংগঠনটির জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার।
সূত্র: এফএনএস।