ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকাল থেকে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন। তবে ছাত্রীদের হলে প্রচারণার সময়সীমা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কঠোর আচরণবিধি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীদের কেবল সাদাকালো পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পোস্টারে প্রার্থীর নিজের ছবি ছাড়া অন্য কোনো ছবি, প্রতীক বা প্রতীকী বার্তা ব্যবহার করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় বা হলের স্থাপনা, গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, যানবাহন বা দেওয়ালে প্রচারসামগ্রী লাগানো নিষিদ্ধ। এছাড়া দেয়াল রঙ, কালি বা চুন দিয়ে লেখালেখিও পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে তোরণ, ফটক, আলোকসজ্জা কিংবা স্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণ করা যাবে না। তবে অস্থায়ী প্যান্ডেল বা শামিয়ানা ব্যবহার করে মঞ্চ বানানো যাবে। ধর্মীয় স্থান, শ্রেণিকক্ষ, পাঠাগার বা পরীক্ষার হলে প্রচারণা চালানো যাবে না। ভোটারদের খাবার, পানীয় বা কোনো ধরনের উপঢৌকন দেওয়া যাবে না। সভা-সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করতে হলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে।
অনলাইনে বা সামাজিকমাধ্যমে প্রচার চালানো যাবে, তবে তা হতে হবে ইতিবাচক ও আইনসিদ্ধ পদ্ধতিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেউ প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
প্রচারণা শুরুর আগে আজ সকালে প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। বৈঠক শেষে বিভিন্ন প্যানেল নিজেদের প্রচারাভিযান শুরু করেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাসে প্রচার শুরু করেছে; গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদও ইতিবাচক প্রচারের ঘোষণা দিয়েছে। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা জানিয়েছেন, তারা প্রচারে নতুন কিছু উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। অন্যদিকে সাতটি বামপন্থী সংগঠনের প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছে।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে মোট ২১ জন প্রার্থী প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বাতিল হওয়া মনোনয়ন নিয়ে আপিল করা ৩৪ জনের মনোনয়নই বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আচরণবিধি ভঙ্গ ও নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কমিটি জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামীকে প্রার্থী ও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। বিষয়টি সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়েছে। জুলিয়াস সিজার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন।
এদিকে এতদিন অনলাইনে উন্মুক্ত থাকা চূড়ান্ত ভোটার তালিকা শিক্ষার্থীদের অনুরোধে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট হল ও দফতরের জন্য তালিকা উন্মুক্ত থাকবে। যেসব শিক্ষার্থী তালিকায় ছবি প্রকাশ করতে চান না, তাদের বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুরের মধ্যে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে সোমবার (২৫ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে নিরাপত্তা–কেন্দ্রিক একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ, ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার, ভোটকেন্দ্রের সুরক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার নিশ্চয়তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র: এফএনএস।