1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

শহীদ পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ

ডিডিএন ডেস্ক:
  • আপডেটের সময় : রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৫
  • ৮২ সময় দর্শন

ফ্যাসিবাদের দুঃশাসন অবসানে পর ভয়ভীতিহীন পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে যাচ্ছে দেশবাসী। নির্বিঘ্নে ও উন্মুক্ত পরিবেশে এ উৎসবের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে ব্যক্তি থেকে বিভিন্ন দল ও সংগঠন।

রাজনৈতিক নেতারাও এলাকাবাসীর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগির ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ঈদ উদযাপন নিয়ে আলাদা আগ্রহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। শুধু হাসি নেই জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের মুখে। তাদের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

শহীদ পরিবারে শুধুই স্বজন হারানোর বেদনা। কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ সন্তান, কেউ ভাই, কেউ বোন কেউ-বা স্বামী। আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বজন হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। ফিরতে পারেনি স্বাভাবিক জীবনে। এতদিনে অনেকে শোক কাটিয়ে উঠলেও শহীদের পুরোনো স্মৃতিতে নতুন করে পরিবারে শোকের মাতম চলছে।

ঈদ তাদের জন্য আর আগের মতো উৎসব নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে বেদনা। কেউ সামর্থ্য থাকলেও কিনছে না নতুন জামা-কাপড়, খাচ্ছে না ভালো খাবার। আর কেউ-বা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দু’চোখে দেখছে অন্ধকার।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় রিকশায় করে আহত ছাত্র-জনতাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন অটোরিকশাচালক আকাশ ব্যাপারী। স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক প্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে ছিল তার সংসার। একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন দিশেহারা এ পরিবার। সন্তানদের খাবার জোগাতে বাধ্য হয়ে ভিক্ষায় নামতে হয়েছে আকাশের স্ত্রী লাকি আক্তারকে। ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতরের কোনো আমেজ নেই এ পরিবারে।

শহীদ আকাশ ব্যাপারীর একমাত্র ছেলে পঙ্গু ও বাকপ্রতিবন্ধী, দুই মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত, এখন পড়ালেখা বন্ধ। লাকি পড়ালেখা জানেন না, মানুষের বাড়িতে বুয়ার কাজ করেন। বাড়িওয়ালাও ঈদে গ্রামে চলে গেছেন। এখন তারা ভিক্ষা করছেন জীবনের প্রয়োজনে। কাগজপত্রের জটিলতার কারণে সরকারিভাবে কোনো সহায়তাও মেলেনি।

শুধু লাকি আক্তার নন, প্রায় একই চিত্র জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অনেক শহীদ পরিবারে। গণঅভ্যুত্থানের পর এটাই প্রথম ঈদ। ফলে ঈদ ঘিরে আনন্দের পরিবর্তে স্বজন হারানোর বেদনায় অন্যরকম শোকে কাতর পরিবারগুলো।

এভাবে রাজধানীর বংশালে শহীদ সোহাগের স্ত্রী সাবিনা আক্তার রুনা বলেন, ‘গত বছর স্বামীর সঙ্গে ঈদ করেছি। ঈদে যা কিছু দরকার হতো সবকিছু তিনিই ব্যবস্থা করতেন। একমাত্র ছেলেটার জন্য কত নতুন পোশাক কিনতাম। এবার স্বামী নেই, কারো জন্যই কিছু কেনা হয়নি। ঈদে কী করব বুঝতে পারছি না।’

জুলাই অভ্যুত্থানে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ মেহেরুন নেছা তানহার মা আছমা আক্তার বলেন, ‘তানহা ছাড়া আমাদের ঘর অন্ধকার। ঈদের দিন সকালে উঠেই মেয়ে নিজ হাতে পোলাও-মাংসসহ সব রান্না করত। কিন্তু এবার তো আমার মেয়েই নেই। আমাদের আর কীসের ঈদ?’

কাফরুলের ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের ছাত্র শহীদ ফয়জুল ইসলাম রাজনের বড় ভাই রাজিব বলেন, ‘ভাইকে ছাড়া ঈদ কতটা কষ্টের সেটা বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। দুই ভাই ঈদের দিন কত আনন্দ করতাম। ঈদ আসছে আর সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ছে। এ বছর আর ভাইয়ের সঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়া হবে না।’

মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ইমন হোসেন আকাশের মা বেবি আক্তার বলেন, ‘আমার জীবন থেকে সব হারিয়ে গেছে। আমার কোনো ঈদ নেই। আমার জীবনের সব সুখ শেষ হয়ে গেছে।’

শহীদ ইসমাইলের মা তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘ছেলেটার কথা মনে হলে বুকটা ফেটে যায়। ছোট মেয়েকেও এ বছর নতুন জামা কিনে দিতে পারিনি। আমাদের আবার কীসের ঈদ?’

জুলাই আন্দোলনে নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ কাপড় ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদের স্ত্রী শাহানাজ বলেন, ‘আমার স্বামী যখন ছিলেন, তখন প্রতি বছর কেনাকাটা ও ঈদের আনন্দ করতাম। এ বছর ওনার অনুপস্থিতিতে ঈদ করব, এটা ভাবতেই পারছি না।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আরেক শহীদ আবদুল কাইয়ুম। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। আবদুল কাইয়ুমের ভাই মোহাম্মদ কাউসার আহমেদ বলেন, ‘এবার আমার ভাই নেই। সে শহীদ হয়েছে। আমার মা প্রতিদিন কাইয়ুমের কথা বলে কান্নাকাটি করেন।’

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হন। সেই আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। আহত হন প্রায় ৩০ হাজার।

এদিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের মধ্যে ৯৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিতরণ করেছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে ৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ৭৪৫টি শহীদ পরিবারের মধ্যে এবং ৫৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা পাঁচ হাজার ৫৯৬ জন আহত ব্যক্তির মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শহীদ পরিবার ও আহতদের সহায়তা করা হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নির্দেশনায় হতাহত ১০ হাজার পরিবারকে ঈদ উপহার পাঠানো হয়েছে।

সূত্র: আমার দেশ

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host