দেশের আকাশসীমা নজরদারির জন্য গৃহীত রাডার প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না। সেজন্য একজন প্রকল্পের বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ৭৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বিগত সরকার আকাশসীমা নিরাপদ রাখতে ও নজরদারি বাড়াতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নত প্রযুক্তির রাডার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেজন্য এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ রাডার স্থাপনে একটি প্রকল্প নেয়া হয়।
তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তুবাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ করতে পারেনি। সেজন্য সংস্থাটি আরো এক বছর মেয়াদ বাড়াতে চায়। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিগত ২০২১ সালের এপ্রিলে তৎকালীন সরকার সিএনএস-এটিএম (কমিউনিকেশন, নেভিগেশন অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স-এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) ব্যবস্থাসহ রাডার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। বেবিচকের নিজস্ব ব্যয়ে ৭৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়। আর বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু মেয়াদ শেষে বর্তমানে এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩.১৭ শতাংশ। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ করতে না পারায় আরো এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বেবিচক।
সম্প্রতি মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সভায় মেয়াদ বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে বেবিচক ফ্রান্সের রাডার প্রস্তুতকারী কোম্পানি থ্যালাসের সঙ্গে বেবিচকের চুক্তি করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে রাডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থ্যালাসের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রকল্প সাইট তাদের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত সাইটে নতুন কার পার্কিং ও রাস্তা নির্মাণ, ইলেকট্রিক ও পানির লাইন, আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল, পিট, সুয়্যারেজ লাইন, হাইভোল্টেজ আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল ইত্যাদি স্থানান্তর এবং নতুন করে স্থাপন করতে হয়েছে। আর ২০২২ সালের মে মাসে এটিএমসিসিটি সাইটটি হস্তান্তর করা হয় এবং রাডার সাইটটি একই বছরের এপ্রিলে হস্তান্তর করা হয়। ফলে ডিপিপি অনুমোদনের পরে চুক্তি সই করতে প্রায় চার মাস এবং সাইট হস্তান্তরে আরো প্রায় চার মাস দেরি হয়।
ওসব কারণেই বর্তমানে প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত বাস্তব অগ্রগতি ৭৩ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ গুণগতমান বজায় রেখে সম্পাদন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কাস্টমার ফার্নিশড ইক্যুইপমেন্ট (সিএফই) প্রদান, ইক্যুইপমেন্ট ইনসটলেশন, ইন্টিগ্রেশন, ক্যালিব্রেশন, বিল পরিশোধসহ অন্য দাপ্তরিক কার্যক্রম সমাপ্তির জন্য প্রকল্পের মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে মতামত প্রদানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে (আইএমইডি) প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে মেয়াদ বৃদ্ধিতে সম্মতি দিয়েছে আইএমইডি।
সূত্র আরো জানায়, অনুমোদিত মেয়াদে প্রকল্পের অবশিষ্ট কার্যক্রম শেষ করতে সময়াবদ্ধ হালনাগাদ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাঠাতে হবে। তাছাঢ়া প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রম ফ্রান্সের সরকারি প্রতিষ্ঠান থ্যালাস টেকনোলজির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বাজারদর যাচাই সাপেক্ষে নেগোসিয়েশন হয়েছে কি না, তা অবহিত করতে হবে। যা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গঠিত কমিটি পর্যালোচনাপূর্বক পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে অবহিত করতে হবে।
তাছাড়া প্রকল্পের অনিষ্পন্ন দুটি অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং এতদসংক্রান্ত অগ্রগতি আইএমইডিকে অবহিত করতে হবে। তাছাড়া প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল থেকে লিক্যুইডিটি সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিক্যুইডিটি সার্টিফিকেটের শর্ত অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে প্রকল্প কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়ার কথা; কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এদিকে এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, লিক্যুইডিটি সার্টিফিকেটের শর্ত অনুসরণ করে প্রকল্পের প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
এফএনএস