দানবীর হাজি জামাল উদ্দিন (২মার্চ ১৮৬১- ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)-এর কথা
————————————————————————-
ফটো ক্রেডিট : কবি নূরুজ্জামান সবুজ,
লেখক- মহি উদ্দিন ভূঁইয়া,পাবনা : জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলা সদরে প্রতিষ্ঠিত ‘হাজি জামাল উদ্দিন সরকারি অনার্স ডিগ্রি কলেজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও দানবীর হাজি জামাল উদ্দিন ২মার্চ ১৮৬১সালে কুষ্টিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ফকির উদ্দিন মাহমুদ তাঁর পিতা।
পিতার একান্ত ইচ্ছে ছিল ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলবেন। জামাল উদ্দিনকে যথারীতি ভর্তি করা হলো নিকটবর্তী একটি পাঠশালায়। কিন্তু পড়াশোনায় কোনোক্রমেই মন বসাতে পারলেন না জামাল উদ্দিন। স্কুল ফাঁকি দেয়া ছিল তাঁর নিত্যদিনের কাজ। বাবা-মায়ের বকুনি খেয়ে তিনি স্কুলে মন বসাতে না পেরে একদিন পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে যোগ দিলেন সার্কাস পার্টিতে। মেধাগুণে এক সময় সার্কাস দলের সদস্য মনোনীত হলেন।
তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমন করেন। পরবর্তীতে তিনি সার্কাস ও মেলায় অংশগ্রহণ পরিত্যাগ করে ভাঙ্গুড়া বাজারে (পশ্চিম পাশে) মুদিখানার দোকান করে ব্যবসায়িক জীবন শুরু করেন। সে সময় তিনি ভাঙ্গুড়া বাজারে ৬ শতক জায়গা কিনে দ্বিতল বাড়ি তৈরি করেন।
জামাল উদ্দিনের সততা ও দক্ষতার গুণে ব্যবসার প্রভূত উন্নতি হয়। মুদিখানা দোকান পরিণত হয় ‘ডিপার্টমেন্টাল স্টোর’-এ।
এক পর্যায়ে তিনি ভাঙ্গুড়া বাজারে ৬টি গোডাউনের মালিক হন। লবণ, কেরোসিন, সাবান-সোডা, বানাতি, হার্ডওয়ার, খেলাধুলার সামগ্রী, পিতল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী, ঘর-বাড়ি তৈরির নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে এক সময় অগাধ সম্পদের মালিক হয়ে যান। তিনি ভাঙ্গুড়া বাজারের আশপাশে সাড়ে তিনশো বিঘা জমি ক্রয় করেন।
ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক নানা কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি আমৃত্যু জড়িত ছিলেন। এক পর্যাায়ে তিনি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু ব্যবসায় ক্ষতি হবার কারণে তিনি পরে এ পদ থেকে অবসর নেন।
হাজি জামাল উদ্দিন তাঁর জীবদ্দশায় নাটোর এবং সিরাজগঞ্জে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং এর নামকরণ করেন “হাজি জামাল অ্যান্ড সন্স ডিপার্টমেন্টাল স্টোর”।
১৯৭০ সালে হাজি মহসিন, আবেদ আলী ও যোগেন গোস্বামীর দেয়া জমি এবং হাজি জামাল উদ্দিনের সম্পূর্ণ আর্থিক সহযোগিতায় ভাঙ্গুড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘হাজি জামাল উদ্দিন কলেজ’। পরবর্তীতে কলেজটি ডিগ্রি কলেজে উন্নীত হয় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মকবুল হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়েছে। কলেজটি অত্র অঞ্চলের অসহায় গরিব মানুষের ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেছে।
পারিবারিক জীবনে হাজি জামাল উদ্দিন চারটি বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন কুষ্টিয়ার মেয়ে মজিরন নেছাকে। মজিরন নেছার কোনো সন্তান ছিল না। দ্বিতীয় বিয়ে করেন ভাঙ্গুড়ার মেয়ে শুকজান নেছাকে। শুকজান নেছার গর্ভে দুই সন্তান – আয়েজ উদ্দিন ও আফজাল উদ্দিনের জন্ম হয়। আয়েজ উদ্দিন নাটোরে এবং আফজাল উদ্দিন ভাঙ্গুড়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তৃতীয় বিয়ে করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেয়ে আফরোজা বেগমকে। আফরোজা বেগমের গর্ভের দুই সন্তান – আফাজ উদ্দিন ও আলাউদ্দিন, উভয়েই প্রয়াত। চতুর্থ বিয়ে করেন মুলাডুলির রাজাপুর গ্রামের মেয়ে কমলা বেগমকে। কমলার গর্ভে কমল উদ্দিন (প্রয়াত) নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ হাজি জামাল উদ্দিন ভাঙ্গুড়ার নিজ বাস ভবনে আনুমানিক ১০৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। আমরা হাজি জামাল উদ্দিনের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমিন।