করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। আগের দুই পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ‘অটো পাস’ নিয়ে অনেকটাই চাপের মধ্যে রয়েছে। তাই চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসিতে ‘অটো পাস’ দিতে রাজি নয় মন্ত্রণালয়। এর বদলে প্রকাশ করা হয়েছে খুবই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। অটো পাসের বিকল্প এই সহজ সিলেবাসে প্রায় সবাই পাস করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সূত্র জানায়, আগামী জুনে এসএসসি ও জুলাই-আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। ফলে মার্চ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার হিসাব ধরে এসএসসিতে ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসিতে সর্বোচ্চ ৮০ কর্মদিবস ক্লাস করানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জানা যায়, প্রথম দফায় গত ২৫ জানুয়ারি এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আপত্তি ওঠার পর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এসএসসি ও এইচএসসির সিলেবাস আরো সংক্ষিপ্ত করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় প্রকাশ করেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রথম দফায় প্রকাশিত সিলেবাসে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার প্রতিটি বিষয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ অধ্যায় নির্বাচন করে সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। এবার সিলেবাস এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে একজন শিক্ষার্থী ন্যূনতম পড়ালেখা করলেই তার পক্ষে পাস করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের নাগরিক। তাই তাদের যতটা অর্জন করার কথা, সেটা না করলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জাতি হিসেবেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। দুই-তৃতীয়াংশ সিলেবাস কমানো খুবই ভয়াবহ। আমার মতে, এটা ভালো সিদ্ধান্ত নয়।’
এনসিটিবির কারিকুলাম প্রণয়ন কমিটির এই সদস্য আরো বলেন, ‘আমরা যে কারিকুলাম করেছিলাম, তাতে দেশের চাহিদা, আন্তর্জাতিক চাহিদা, নৈতিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা—সব কিছুই রেখেছিলাম। এখন যে অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে, তা হয়তো উচ্চশিক্ষায় প্রয়োজন হবে। কারণ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিক্যাল কলেজ তো দুর্বল ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার বানাতে চাইবে না। এতে তাল মেলাতে না পেরে কেউ ড্রপ আউট করবে। কেউ কোচিং করে উতরে যাবে। তবে শিক্ষার্থীরা যে উচ্চশিক্ষায় হোঁচট খাবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।’
এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে দেখা যায়, বাংলা প্রথম পত্রে মোট সাতটি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মোট ৯টি পদ্য, উপন্যাস ও নাটক দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পত্রে দেওয়া হয়েছে ছয়টি অধ্যায়। ইংরেজি প্রথম পত্রে আটটি অধ্যায় ও দ্বিতীয় পত্রের সিলেবাসও খুবই সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। ইংরেজি বিষয়ে প্রশ্নের কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজির গ্রামার অংশের ন্যারেশন, বাক্য গঠনসহ বেশ কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইংরেজিতে রচনাও লিখতে হবে না। ছোট হওয়া সিলেবাসে সব বিষয়েই প্রশ্নের বিভাজন ও নম্বর কাঠামো ঠিক থাকবে। অর্থাৎ যে সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে, সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে।
এসএসসির অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং ব্যবসায় উদ্যোগে ছয়টি করে অধ্যায়; পদার্থবিজ্ঞানে পাঁচটি; জীববিজ্ঞান ও রসায়নে চারটি করে অধ্যায়; পৌরনীতিতে পাঁচটি; ইতিহাসে সাতটি; ভূগোলে ছয়টি; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে তিনটি; কৃষিশিক্ষায় তিনটি; উচ্চতর গণিতে চারটি; ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষায় পাঁচটি; গণিতে পাঁচটি এবং বিজ্ঞানে ছয়টি অধ্যায় রাখা হয়েছে। এইচএসসি ও সমমানের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেও প্রায় একই রকম অধ্যায় রাখা হয়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসির অত্যাবশ্যকীয় শিখন ফল যেগুলো দরকার, সেগুলো রাখা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পাস করা সহজ হলেও কিছু ক্ষতি তো হবেই। পরবর্তী ক্লাসে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবে যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে, তারা কিন্তু নবম শ্রেণির পুরোটাই পড়েছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হলেও বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’