1. admin@ddnnewsbd.com : admin : ddn newsbd
  2. mamahbubulalom@gmail.com : mahbubul alom : mahbubul alom
মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন—জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল: জামায়াতের তাহের চাটমোহরে আওয়ামী লীগ নেতা মকবুল কারাগারে জবাবদিহিমূলক, মানবিক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব: প্রধান উপদেষ্টা ভাঙ্গুড়ায় বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা  ও আলোচনাসভা অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন : তারেক রহমান সাঁথিয়ায় সরকারি সম্পত্তিতে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন অবকাঠামো উচ্ছেদ খুনিদের ভয়ে কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে পারি না:শহীদ জাহিদুলের বাবা ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে:রাষ্ট্রপতির বাণী আসুন এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না : প্রধান উপদেষ্টা ইসির খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ ১০ আগস্ট, চূড়ান্ত তালিকা ৩১ আগস্ট

খুনিদের ভয়ে কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে পারি না:শহীদ জাহিদুলের বাবা

পাবনা প্রতিনিধি
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫
  • ৩০ সময় দর্শন

‘বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরব কিনা এটার নিশ্চয়তা পাই না। স্কুল শেষ করে বাড়িতে পৌঁছাতে পারব কিনা এটারও নিরাপত্তা নেই। ছেলেমেয়েরা বাড়ির বাহিরে বের হলেও শঙ্কায় থাকতে হয়।’

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ জাহিদুল ইসলামের বাবা দুলাল উদ্দিন মাস্টার।‎মঙ্গলবার (৩ আগষ্ট) সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের চর বলরামপুর এলাকার শহীদ জাহিদুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে কথা তার সঙ্গে।

দুলাল উদ্দিন মাস্টার বলেন, ৫ তারিখে স্বৈরাচার পতন হলেও বর্তমানে আমরা খুবই নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করছি। এসব খুনি ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে ৯ মাস হলো কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে পারি না। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। রাতেও আমরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

‎তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পুলিশ প্রশাসনও আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না। তারা আমাদের খোঁজখবর পর্যন্ত নিচ্ছে না। কোনো কাজে পুলিশকে ফোন দিলেও বলে যে দেখতেছি। এরপর আর কোনো খবর থাকে না। আমরা খুবই নিরবিলি প্রকৃতির লোক। চাইছিলাম কোনো কেস-কাচারি করব না। রাজনৈতিক নেতারা আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। এখন তারা আমাদের খোঁজখবর ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। যেটা খুবই দুঃখজনক। এক বছর হয়ই নাই অথচ বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে ইয়ারকি টিটকারি করে। আসলে সামনে তো আমরাই অপরাধী হয়ে যাব বলে মনে হচ্ছে।

‎পুলিশের কোনো কথা শুনছে না বলে অভিযোগ করে দুলাল উদ্দিন মাস্টার বলেন, হত্যা মামলার আসামি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এখনো বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছে। এ বিষয়ে সদর থানায় জানালেও কোনো সহযোগিতা করেনি। পুলিশ আসামিদের থেকে নিয়মিত টাকা খাচ্ছে। আসলে পুলিশ টাকা কামিয়ে লাভবান হচ্ছে। আমাদের কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয় না। কোনো কাজের জন্য ফোন দিলে ওসি বলেন যে দেখতেছি। এরপর আর কোনো খবর নেই। মাঝেমধ্যে মনে কষ্ট পাই যে, এতো মানুষ জীবন দিলো তাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। ভবিষ্যত অন্ধকার।

তিনি বলেন, গর্বিত একজন শহীদের মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। এর চেয়ে আর নিকৃষ্ট কাজ কি হতে পারে?। তাহলে আমরা শহীদ পরিবার কি রাষ্ট্রের কাছে বুঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি। আসামিরা খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক, তারা যে কোনো সময় আমাদের যে কোনো ক্ষতি করতে পারে। পুলিশ তো কোনো আসামি ধরতেই পারেনি। কয়েকজন আসামি ধরলেও পাবলিক ধরে দিছে, এখানে পুলিশের কোনো পদক্ষেপ নেই। কোথায় মাটি কাটবে বালু কাটবে এগুলো নিয়ে পুলিশ মহাব্যস্ত। মামলার কোন কাজের খবর নেই। রাস্তাঘাট শেষ করে দিলো বালু খোকোরা। এগুলো নিয়ে কাজ করলে মামলার কাজ করবে কীভাবে। পাবনার অনেক রানিং চেয়ারম্যান আছেন তারা পর্যন্ত মামলা থেকে এমপি প্রিন্সের নাম কাটানোর জন্য সুপারিশ নিয়ে আসতেছে। আসলে মামলা যাদের নামে হয়েছে তারা তো প্রকৃতই দোষী। এদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।

শহীদ জাহিদুল ইসলামের মা আপিয়া খাতুন বলেন, দিন চলতেছে খুবই কঠিনের মধ্যে দিয়ে। তিনটি ছেলের একটি চলে গেছে। তাদের জন্য খুবই ভয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেক রকম হুমকি-ধমকি আসতেছে। আসামি তো ধরাই পড়তেছে না। যাই বা ধরা পড়ছিল পুলিশ টাকা খেয়ে ছেড়ে দিয়েছে। আসল আসামিদের ধরার কোনো চিন্তাই নাই। প্রশাসন টাকা খায়ে ঠান্ডা হয়ে আছে। বেদনা নিয়েই বুকে চেপে দিন কাটাতে হচ্ছে। শহীদের রক্ত বেঁচে কোটি কোটি টাকা কামাই করতেছে। সাঈদকে তো ধরতেই পারল না। প্রধান খুনিরা দেশেই ঘাপটি মেরে আছে। এদের ধরে কঠিন বিচার করলেই শান্তি পেতাম। প্রকাশ্যে অনেক আসামিই ঘুরে বেড়াচ্ছে।  হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি।

‎শহীদ জাহিদুল ইসলামের ভাই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভাইয়ের আন্দোলনের স্মৃতি এখনো মনে পড়লে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। আল্লাহ ভাইকে যেন শহীদি মৃত্যুর জন্য জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। আসলে আমার ভাই শহরের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। হোয়াটস অ্যাপে গ্রুপ খুলে সবাইকে একত্র করতেন। আন্দোলনের জন্য আলাদা গ্রুপ ছিল। সেখানে সব কর্মসূচি দেওয়া হতো। সে বলত আন্দোলনে সবার আগে থাকতে হয়। পেছনে থাকলে শহীদ হওয়া যায় না।  খুনিরা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়াতে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। রাস্তাঘাটে ঠিকমতো বের হতে পারি না।

‎শহীদ জাহিদুল ইসলামের বাবা দুলাল উদ্দিন মাস্টার পশ্চিম চর বলরামপুর স্কুলের সহকারী শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে পড়াশোনা করেন। ছোট ভাই নাহিদুল ইসলাম এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে চর বলরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। বোন দিলারা পারভীন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করে বর্তমানে হেলথে চাকরি করছেন।

‎বাড়িতে ‎শহীদ জাহিদুল ইসলামের নামে দোতালা ফাউন্ডেশন দিয়ে পাঠাগার বানানো হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ফাউন্ডেশন করে গরিব মানুষের জন্য সহযোগিতা করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

‎‎বাড়িতে ‎শহীদ জাহিদুল ইসলামের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, জুলাই ফাউন্ডেশন ৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। এছাড়াও ডিসি অফিস থেকে দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আড়াই লাখ টাকা দিয়েছে। এছাড়াও শিবিরও অনুদান দিয়েছে। পলিটেকনিক্যালের আইডিবি ভবন থেকে ১ লাখ টাকা দিয়েছে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। শেকড় পাবনা ফাউন্ডেশন দিয়েছে ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া ক্রেস্ট, স্মারক গন্থ, শহীদদের জীবনী গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে।

পাবনার আন্দোলনে নিহত দুই শিক্ষার্থী হলেন- সদর উপজেলার চর বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে ও পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং হাজিরহাট বেতেপাড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে ও শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহবুব হাসান নিলয় (১৪)।

‎এ ঘটনায় গত শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে নিহত পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামের বাবা মো. দুলাল উদ্দিন মাস্টার বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় মামলা করেন।

‎মামলায় পাবনা-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দসহ ১০৩ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও একটি বিস্ফোরক মামলা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ার অভিযোগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন গ্রেপ্তার আছেন। আর বিস্ফোরক মামলায় ১১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

‎পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) এ এফ এম মনিরুজ্জামান মন্ডল বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো শহীদ পরিবার অভিযোগ দেইনি যে তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। আমরা সব সময় তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন গ্রেপ্তার আছেন। আর বিস্ফোরক মামলায় ১১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। দুটি মামলাই তদন্তাধীন রয়েছে। খুব দ্রুতই চার্জশিট গঠন করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
২০২০© এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ*
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Smart iT Host