পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে অবস্থিত বি বি দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী (প্রাথমিক) শাখার শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান—তবে সেই শ্রেণিকক্ষটি দেখে সাধারণ কেউ একে শ্রেণিকক্ষ ভাবতেই পারবেন না। জরাজীর্ণ টিনশেড ঘর, চালে ফুটো, বৃষ্টি হলে পানি পড়ে, বাতাসে দুলে ওঠে কাঠামো—এসবের মধ্যেই শিশুরা প্রতিদিন বাংলা, ইংরেজি, অঙ্কের পাশাপাশি পবিত্র কোরআন ও হাদীসের পাঠ নিচ্ছে।
১৯৭৪ সালে বেতুয়ান ও ফরিদপুর উপজেলার বৃলাহিড়ীবাড়ি গ্রামের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মাদ্রাসা। দুই গ্রামের আদ্যাক্ষর নিয়েই রাখা হয় ‘বি বি’ নামটি। ১৯৯৪ সালে সরকারি এমপিওভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি এবং আজ পর্যন্ত সুনামের সাথেই চলছে। বর্তমানে এবতেদায়ী (১ম-৫ম শ্রেণি) ও দাখিল (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি) পর্যায়ে মোট প্রায় ৩৫০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।
তবে বছরের পর বছর ধরে অবকাঠামোগত অবহেলায় পড়ে আছে প্রাথমিক শাখার শিক্ষার্থীদের ভবন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নড়বড়ে কাঠামোর মধ্যে শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়ে, ভিজে যায় বইপত্র।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবাইয়া জানায়, “আমরা অনেক ভয় পাই। বাতাসে ঘরটা কাঁপে, মনে হয় ভেঙে পড়বে। বৃষ্টি হলে বই ভিজে যায়।”
সহকারী শিক্ষক মোঃ আলী আকবর বলেন, “ছাত্রছাত্রী কম থাকলে কোনোভাবে ক্লাস নেওয়া যায়, তবে বেশি হলে অন্য ভবনের বারান্দায় ক্লাস করতে হয়।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে একটি ভবন নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘ ব্যবহারে তা পরিত্যক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারিভাবে তা সংস্কার করা হলেও প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য আলাদা নতুন ভবন এখনও হয়নি। ২০২৩-২৪ সালে এলাকাবাসীর সহায়তায় একটি টিনশেড ভবন নির্মিত হয়েছে, যা দাখিল শাখার সংকট মোটামুটি দূর করলেও ছোটদের অবস্থা অপরিবর্তিত।
মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে নেই কোনও সীমানা প্রাচীর। ফলে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায় গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি। স্থানীয় মানুষজনও মাঠ ব্যবহার করে নানা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। এতে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শ্রেণী কার্যক্রম চলার সময়ও বহিরাগত যুবকদের উপস্থিতি নিয়মিত দেখা যায় বলে জানান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শৌচাগারের সংখ্যাও অপ্রতুল। ছেলে ও মেয়েদের জন্য মাত্র চারটি শৌচাগার, যা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও ব্যবহার করতে হয়। শিক্ষকদের নিজস্ব বসার উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেই।
মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাওলানা মোঃ হযরত আলী বলেন, “মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পরিবেশ থাকা দরকার। শিক্ষক হিসেবে আমরা অনেক সময় অসহায় বোধ করি যখন আমরা তার নিশ্চিত করতে পারিনা।”
মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ভাতা বাবদ প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আয় বলতে গেলে নেই। কয়েকটি দোকান ভাড়া ও অল্প কিছু সরকারি অনুদানেই চলে সার্বিক খরচ।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ
এনএইচ