আজ সোমবার সংবাদপত্র শিল্পের কালো দিবস । গণমাধ্যমের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন একদলীয় বাকশাল সরকার নাৎসী কায়দায় তাদের অনুগত চারটি সংবাদপত্র ছাড়া সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। এই পদক্ষেপ বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদকর্মীকে বেকার করে হতাশার অতল গহ্বরে ঠেলে দেয়।
বেকার হয়ে পড়ে হাজার হাজার সাংবাদিক। মিডিয়া শিল্পে বিনিয়োগকারীরা হয়ে পড়ে দেউলিয়া। জনগণ বঞ্চিত হয় সত্য খবর থেকে। সংবাদপত্র না থাকায় লুটেরা গোষ্ঠী আনন্দে মেতে ওঠে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে এমন কলঙ্কময় দিন আর আসেনি।
এক সময় সব মতপথের সাংবাদিকরা দিবসটি পালন করলেও বিগত কয়েক বছর ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী সাংবাদিকরা আর এ দিবসটি পালন করেনি। তবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন বরাবরই দিবসটি পালন করে আসছে।
বরাবরের মতো এবারও সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জেলায় সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশ স্বাধীনের মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে আনা হয়েছিল সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী। এর ফলে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে একদলীয় শাসন বাকশালের জগদ্দল পাথর। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর ১৬ জুন সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক দিন এটি।
পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ’৭৫ সালের নভেম্বরে সিপাহি-জনতার বিপ্লবে ক্ষমতাসীন হয়ে সংবিধানে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে বাকশাল সরকারের সব অগণতান্ত্রিক কালো ধারা বাতিল করেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারো প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাঁটে দলটি। বাকশালী শাসনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বিগত ১৫ বছর (২০০৯ থেকে ২০২৪) শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পুরোনো বাকশালের পুনরুত্থান ঘটিয়ে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এ সময়ে নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরা হয়। বন্ধ করে দেয় আমার দেশ, দিনকাল, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি, চ্যানেল-১ টিভিসহ অসংখ্য গণমাধ্যম।
সত্য প্রকাশে খুনের শিকার হন ৫৮ জন সাংবাদিক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা মামলায় জেল-জুলুম গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের প্রাক্তন সম্পাদক আবুল আসাদ ও বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি মরহুম রুহুল আমিন গাজীসহ বহু সাংবাদিক, শিক্ষক, পেশাজীবী এমনকি শিশু শিক্ষার্থীরাও।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে মন্ত্রী-এমপি ও ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমালোচনা করলেই সাংবাদিকদের হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অরাজক এই দুঃসময়ে সব গণমাধ্যমের কর্মীকে শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
৭৫-র এই দিনের বিভীষিকা বিগত ১৫ বছরেও ভিন্ন মাত্রায় ভয়ঙ্কর হিংস্র রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল। অবশেষে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে নব্য ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয় দেশবাসী ও গণমাধ্যম।
সূত্র: আমার দেশ।