প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। যা তাঁর প্রথম মেয়াদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং নতুন করে আইনি চ্যালেঞ্জের শঙ্কা তৈরি করেছে। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, সম্প্রতি কলোরাডোর বোল্ডারে একটি ইহুদি বিক্ষোভে ‘মেকশিফট ফ্লেমথ্রোয়ার’ দিয়ে চালানো হামলার পেছনে ছিলেন একজন অবৈধ মিশরীয় অভিবাসী, ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আফগানিস্তান, মিয়ানমার, শাদ, কঙ্গো-ব্রাজাভিল, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়া বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা-এই সাত দেশের নাগরিকদের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে এসব দেশের কিছু অস্থায়ী কর্মসংস্থান ভিসার অনুমোদন বহাল থাকবে।
এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, ‘সম্প্রতি বোল্ডারে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তা প্রমাণ করে অপর্যাপ্তভাবে যাচাইকৃত বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ আমাদের জন্য কতটা বিপজ্জনক। আমরা তাদের চাই না।’
বিশ্বকাপ, অলিম্পিক ও কূটনীতিকরা নিষেধাজ্ঞার বাইরে
নতুন আদেশ অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ (যা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো যৌথভাবে আয়োজন করবে) ও ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে অংশ নেওয়া ক্রীড়াবিদরা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন না।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক জানান, এই নিষেধাজ্ঞা কূটনীতিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন, ‘যে কোনো অভিবাসন ব্যবস্থা মানুষের মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে পরিচালিত হওয়া উচিত। তবে সীমানা নিয়ন্ত্রণ করা প্রতিটি দেশের নিজস্ব এখতিয়ার।’
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, ‘নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপকতা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগজনক।’অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ এ সিদ্ধান্তকে ‘বৈষম্যমূলক, বর্ণবাদী ও নির্মম’ বলে অভিহিত করেছেন।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যার বিষে প্রভাবিত’ হওয়ার অভিযোগ করেন। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাবেলো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই বরং ভেনেজুয়েলাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।
আফ্রিকান ইউনিয়ন বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা ‘মানুষে-মানুষে সম্পর্ক, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক আদান-প্রদান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’ তারা গঠনমূলক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা বা যুদ্ধবিধ্বস্ত মানবিক সংকটে থাকা ইয়েমেনিদের ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছে সানার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার।মাত্র দু’দিন আগে মার্কিন ছাত্র ভিসা পেয়েছেন মিয়ানমারে এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে বেঁচে নেই বললেই চলে। মানুষ নিঃশ্বাস নিতে, হাঁটতে, পড়াশোনা করতে চায়। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাই।’
হাইতির মানবাধিকারকর্মী পিয়েরে এসপারেন্স বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে আরো বেশি করে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করবে।
আইনি চ্যালেঞ্জ আসার সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তটিও আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, যেমনটি ট্রাম্পের পূর্ববর্তী অনেক কঠোর অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রেও হয়েছিল।
‘সন্ত্রাসী’ অভিযোগের পেছনে মিশরীয় নাগরিক
কলোরাডোর বোল্ডারে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তের নাম মোহাম্মদ সাবরি সোলাইমান। আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, তিনি ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তবে ভিসার মেয়াদের চেয়ে অতিরিক্ত সময় অবস্থান করেছেন। পরবর্তীতে আশ্রয়ের আবেদন করেন। যদিও এবারের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় মিশরের নাম নেই।
প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা যুক্তি
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে প্রতিটি দেশের জন্য নিষেধাজ্ঞার যুক্তি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আফগানিস্তান, লিবিয়া, সুদান, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের কেন্দ্রীয় সরকার ‘পাসপোর্ট যাচাই ও নাগরিক যাচাইয়ের মতো দায়িত্ব পালনে অক্ষম’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইরানকে ‘সন্ত্রাসে মদদদাতা রাষ্ট্র’ হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় অন্তর্ভুক্ত। বাকি দেশগুলোর বিষয়ে বলা হয়েছে, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নাগরিকদের অবস্থান করার হার গড়ের চেয়ে বেশি।
সূত্র: বাসস