বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে বালু-মাটি রপ্তানির সুযোগ রাখা হলেও প্রক্রিয়া নির্ধারিত ছিল না। বালু ও মাটি রপ্তানির প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে নতুন ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২৫’ এর খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
উক্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, এ এস এম সালেহ আহমেদ এর সভাপতিত্বে আজ ১৭ মে শনিবার সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বিষয়ে একটি অনলাইন কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে অনিবার্য কারণবশত তা পিছিয়ে আগামী সোমবার নেয়া হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১’ হালনাগাদকরণের বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দীর্ঘদিনের পুরাতন হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের ভিত্তিতে প্রদত্ত ইজারাধীন বালুমহালের ক্ষেত্রে নতুন করে ইজারা কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে পুনরায় হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ সম্পন্ন করে ইজারা কার্যক্রম গ্রহণ করা, সূর্যাস্তের পর বালু উত্তোলন বন্ধ করা এবং অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু নিলামে বিক্রয় না করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজে ব্যবহার করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০’-এর আওতায় জারিকৃত ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১’ হালনাগাদকরণের বিষয়ে আলোচনা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তারা খসড়া বিধিমালাটি চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে বালু ও মাটি রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
২০১০ সালের বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে রপ্তানির বিষয়টি আছে। কিন্তু কী পদ্ধতিতে রপ্তানি হবে সেটি নির্ধারিত ছিল না। বলা ছিল, বিধিমালা দিয়ে তা নির্ধারিত হবে। কিন্তু ২০১১ সালে আইনের অধীনে করা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালাতেও তা ছিল না। এখন নতুন বিধিমালায় সেটি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ দেশের প্রধান নদীগুলোতে নাব্য সংকট রয়েছে। বালুর চরে হারিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কিলোমিটার নৌপথ। প্রতি বছর খননের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলো সচল রাখতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে নদীগুলোর অতিরিক্ত বালু রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ এ বিষয়ে আগ্রহও দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, বিগত সময়ে সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে বালু আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে। পরে আর সেই উদ্যোগগুলো আলোর মুখ দেখেনি। খসড়া বিধিমালায় বালু বা মাটি রপ্তানির বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকারের সময় প্রণীত রপ্তানি নীতি ও আদেশে বালু ও মাটি রপ্তানির বিধান থাকা সাপেক্ষে বাংলাদেশ থেকে বালু বা মাটি বিদেশে রপ্তানির কেস টু কেস প্রস্তাবের বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় এই বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এতে বলা হয়, নদীর কোনো ডুবোচর বা চর যেখানে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ অনুযায়ী উত্তোলনযোগ্য বালু বা মাটি আছে, ওই স্থান থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করলে পরিবেশ বা প্রতিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বা নদী ভাঙনের শিকার হবে না বা নদীর গতিপথের পরিবর্তন হবে না বা সরকারি কোনো স্থাপনার ক্ষতি হবে না, এ বিষয়ে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার ইতিবাচক মতামত থাকলে, কেবল সেই স্থান থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করে বিদেশে রপ্তানির জন্য আবেদন করতে পারবে।
বালু বা মাটি রপ্তানি করতে আগ্রহী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশের আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ফরমে দাখিল করা আবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে ভূমি মন্ত্রণালয় কেবল সে ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ নেবে বলে বিধিমালায় বলা হয়েছে।
আবেদন পাওয়ার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগ তা প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করে আবেদনটি যথাযথ হলে পরীক্ষা করে সুপারিশ ও মতামত দিতে তা সুপারিশ প্রেরণ কমিটির কাছে উপস্থাপন করবে।
সূত্র: বাসস